গাজা সিটি: মঙ্গলবার ভোরে গাজার মাটিতে ফের ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী৷ এই হামলার জেরে ২০০ জনেরও বেশি প্যালেস্টিনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রথম দফার যুদ্ধবিরতির পর গাজায় এই প্রথম এত তীব্র আক্রমণ চালানো হল। নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু ও নারী রয়েছেন৷ আবাসিক এলাকায় এই হামলা চালানোয় হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন৷
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, হামলার লক্ষ্য ছিল হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং সামরিক স্থাপনাগুলি। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলাটি রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হয়েছে এবং তাদের লক্ষ্য হামাসের আক্রমণাত্মক কার্যক্রম রোধ করা।
পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও অগ্রগতি না হওয়ায়, মঙ্গলবার ভোরে গাজায় বিমান হামলা শুরু হয়। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা হামাসের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ নেবে এবং প্রয়োজন হলে হামলা চালানোর গতি আরও বাড়ানো হবে।
গাজায় ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি, উদ্ধার কাজ চলছে
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এবং সিএনএন সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলা চালানোর পর গাজা সিটি-সহ দের আল-বালাহ, খান ইউনুস ও রাফাহ এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলে। বেশ কিছু আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এবং বহু লোক ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন। গাজার প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে।
গাজার অনেক হাসপাতাল ইতিমধ্যেই রোগী ভর্তি হওয়ার পরিপূর্ণ এবং তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সেবা সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রয়োজন।
গাজার পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এদিকে, গাজার সাধারণ মানুষ হামলার তীব্রতায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গোলাবারুদ এবং বিমান হামলার শব্দে পুরো শহর কেঁপে উঠছে, যা আরও একবার গাজার বিপর্যস্ত পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরছে। আন্তর্জাতিক মহল এই হামলার নিন্দা জানালেও, কার্যকর পদক্ষেপের দেখা মিলছে না।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজার জন্য জরুরি মানবিক সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে, তবে যেহেতু গাজার সীমান্তে অবরোধ রয়েছে, তাই ত্রাণ পৌঁছানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি গাজার মানবিক বিপর্যয়ের গভীরতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ইসরায়েলের সামরিক কৌশল এবং ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু-র দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলা রাজনৈতিক অনুমোদন নিয়ে চালানো হয়েছে এবং এটি সামরিক শক্তির একটি বড় প্রদর্শন। তিনি জানিয়েছেন, হামাসের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং যতদিন প্রয়োজন, ততদিন হামলা চালানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজার পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে, যদি আন্তর্জাতিক মহল এই সংঘর্ষের সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়। এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা হামাসের বিরুদ্ধে চলমান সামরিক অভিযান আরও তীব্র করবে, যা আগামী দিনে সংঘর্ষকে আরও জটিল করতে পারে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি: মানবিক সংকট এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা
গাজার চলমান পরিস্থিতি এখন একটি ভয়াবহ মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে অন্তত ৪৮,০০০ প্যালেস্টিনীয় নিহত হয়েছে এবং প্রায় ২.৩ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। এই বিশাল সংকটের মধ্যে, মানবিক সহায়তা কার্যক্রম এবং যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে খুবই ক্ষীণ আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যে উত্তেজনা অব্যাহত আছে, তা কি একবারে শান্তির দিকে এগিয়ে যাবে, নাকি এটি আরও বড় আকারে সংঘর্ষে পরিণত হবে? সময়ই এর উত্তর দিতে সক্ষম হবে।