হাই কোর্টের নির্দেশে OBC শংসাপত্র বাতিল, ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ফুরফুরা শরিফে ইফতারের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একাধিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন, তবে প্রধান আলোচনার বিষয় ছিল রাজ্যে…

Mamata Banerjee Opens Up About OBC Certificate Cancellation Issue, Blames Legal Hurdles for Delayed Appointment

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ফুরফুরা শরিফে ইফতারের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একাধিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন, তবে প্রধান আলোচনার বিষয় ছিল রাজ্যে OBC (অন্যান্য পটভূমির) শংসাপত্র সংক্রান্ত আইনি জট। তিনি জানান, রাজ্যে হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর নিয়োগ আটকে রয়েছে এই শংসাপত্রের সমস্যার কারণে। তাঁর দাবি, ‘‘লিস্ট প্রায় তৈরি ছিল, তবে মামলার কারণে ডাক্তার এবং নার্সদের নিয়োগ করা যাচ্ছে না।’’

গত বছর, ২২ মে কলকাতা হাই কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেছিল, যার মাধ্যমে রাজ্য সরকারের প্রায় ১২ লক্ষ OBC শংসাপত্র বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আদালত জানিয়েছিল, ২০১০ সালের পর তৈরি হওয়া সমস্ত OBC শংসাপত্র বাতিল করতে হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, কারণ বহু চাকরি প্রার্থী এবং ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এরপর রাজ্য সরকার এই নির্দেশকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করে। তবে, সুপ্রিম কোর্ট কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি, যার ফলে এখনো পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর আছে এবং রাজ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে।

   

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘এ মুহূর্তে OBC রিজার্ভেশন মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এর কারণে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার লিস্ট প্রায় তৈরি ছিল, কিন্তু মামলার কারণে ডাক্তার এবং নার্সদের নিয়োগ করতে পারছি না।’’ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বহুবার এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও আইনি জটিলতা এখনও মেটেনি।

এছাড়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান যে, হুগলি জেলায় একটি নতুন পলিটেকনিক কলেজ এবং ১০০ শয্যার হাসপাতালের নামকরণ করা হবে পীরজাদা আবু বকর সিদ্দিকির নামে। এই হাসপাতালটি অত্যাধুনিক পরিকাঠামো এবং চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে চালু করা হবে, যা এলাকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নত করবে।

OBC (অন্যান্য পটভূমির) ক্যাটাগরির শংসাপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি বিভিন্ন সরকারি পদে চাকরি প্রাপ্তির জন্য রিজার্ভেশন সুবিধা প্রদান করে। যদিও এই শংসাপত্রের অধিকারী প্রার্থীরা তাদের অধিকারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন, তবুও কিছু আইনি জটিলতার কারণে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

কলকাতা হাই কোর্টের রায় অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর তৈরি হওয়া সমস্ত OBC শংসাপত্র বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে, যারা আগে OBC শংসাপত্র পেয়েছিলেন, তারা চাকরি বা শিক্ষার ক্ষেত্রে সেই সুবিধা পাবেন না। রাজ্য সরকার অবশ্য এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে, তবে এখনও কোনো স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি।

OBC শংসাপত্রের আইনি জটিলতা রাজ্যে হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীকে বিপাকে ফেলেছে। একদিকে রাজ্য সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন, অন্যদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। এর ফলে বহু যুবক-যুবতী চাকরি প্রাপ্তির সুযোগ হারাচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকবারই এই সমস্যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং জানিয়েছেন যে, আইনি জটিলতার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়োগ সম্ভব হবে না।

তবে, মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সমস্যার সমাধান হবে এবং রাজ্যে চাকরি প্রার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। তার মতে, আদালতের নির্দেশে কোনো স্থগিতাদেশ না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্যা চলতে থাকবে।

রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। এখন আদালত যদি কোনো স্থগিতাদেশ দেয়, তবে রাজ্য সরকার দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। তবে, যতদিন পর্যন্ত এই আইনি জটগুলি মীমাংসিত না হয়, ততদিন রাজ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে।

এছাড়া, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ চলছে। হাসপাতাল ও পলিটেকনিক কলেজের মতো প্রকল্পগুলির উদ্বোধন রাজ্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, একদিকে রাজ্যের শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা চাকরি না পেয়ে ক্ষুব্ধ, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইনি জটিলতার সমাধান চেয়ে আদালতের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।