সোমবার বিকেলে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী (Hamza Choudhury)। তার আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই ওপার বাংলার ফুটবল মহলে উচ্ছ্বাসের ঝড় উঠেছে। আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ (AFC Asian Cup 2027) যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভারতের (India) বিপক্ষে বাংলাদেশের (Bangladesh) হয়ে মাঠে নামবেন এই ২৭ বছর বয়সী ফুটবলার। তাঁকে ঘিরে সমর্থকদের উন্মাদনা এতটাই যে, মনে হচ্ছে তিনি কোনও সাধারণ খেলোয়াড় নন, বরং মেসি বা রোনাল্ডোর মতো বিশ্ব তারকা। তবে প্রশ্ন উঠছে, এই উচ্ছ্বাস কি সত্যিই মাঠে ফল দেবে? ভারতের সুনীল ছেত্রীদের মতো অভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে হামজা কি বাংলাদেশের মান রক্ষা করতে পারবেন?
হামজা সোমবার সিলহেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মা রাফিয়া চৌধুরী, স্ত্রী অলিভিয়া চৌধুরী, তিন সন্তান এবং দুই ভাই। বিমানবন্দরে হাজার হাজার সমর্থক ও মিডিয়ার ভিড়ে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারাও তাঁকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। হামজা বলেন, “ইনশাআল্লাহ, আমরা ভারতের বিপক্ষে জিতব এবং এগিয়ে যাব।” তিনি সম্প্রতি শেফিল্ড ডার্বিতে শেফিল্ড ওয়েডনেসডের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়ের পর বাংলাদেশে এসেছেন, যা তাঁর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে।
হামজার ফুটবল জীবন শুরু হয়েছিল লেস্টার সিটির একাডেমিতে। ২০২১ সালে তিনি এই ক্লাবের হয়ে এফএ কাপ জিতেছেন। বর্তমানে তিনি প্রিমিয়ার লিগের এই ক্লাব থেকে লোনে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলছেন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের পাসপোর্ট গ্রহণ করেন এবং ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর আগমন বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
“InshaAllah, we will win against India!” – Hamza Choudhury 🇧🇩⚽🔥
The greatest superstar in Bangladesh football history,South Asia’s Biggest superstars, a top-class Asian midfielder, and the only Bangladeshi footballer to play in the English Premier League, @HamzaChoudhury1,… pic.twitter.com/mDkdmxOdkZ
— Hasnat Abdullah (@Hasnat_A_) March 17, 2025
বাংলাদেশ দল বর্তমানে সৌদি আরবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তারা মঙ্গলবার দেশে ফিরবে এবং বুধবার হামজা ঢাকায় দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। প্রাথমিকভাবে ২৩ মার্চ শিলংয়ে পৌঁছানোর পরিকল্পনা থাকলেও, শিলংয়ের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে দলটি ২০ মার্চই সেখানে যাবে। বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা হামজাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেছেন, “তাঁর অভিজ্ঞতা ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব দলের জন্য বড় সম্পদ হবে।” গত আটটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৫ গোল হজম করা বাংলাদেশের মিডফিল্ডে হামজার ডিফেন্সিভ দক্ষতা শক্তি যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ভারতীয় দলেও সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন এই ম্যাচকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে এটি ইতিমধ্যেই ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ভারতের ফিফা র্যাঙ্কিং ১২৭, আর বাংলাদেশের ১৮৫। তবে সাম্প্রতিক চারটি মুখোমুখি ম্যাচে ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র একটি জয় পেয়েছে, বাকি তিনটি ড্র হয়েছে। হামজার যোগদানে বাংলাদেশের শক্তি বেড়েছে, যা ভারতীয় কোচ মানোলো মার্কেজের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে।
ইংলিশ ফুটবলের উচ্চ গতির খেলায় অভ্যস্ত হামজা ভারতীয় খেলোয়াড়দের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারেন। তাঁর বহুমুখী মিডফিল্ডিং দক্ষতা ভারতের মিডফিল্ডকে চাপে ফেলতে পারে। তবে হামজাকে নিয়ে বাংলাদেশে যে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে, তা কি মাঠে ফল দেবে? অনেকে মনে করছেন, এই মাতামাতি বাস্তবে রূপান্তরিত না হলে হতাশা অনিবার্য।
সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। একজন সমর্থক বলেন, “হামজা আমাদের জন্য গর্ব। তিনি এলে আমরা ভারতকে হারাতে পারব।” তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন খেলোয়াড়ের ওপর ভর করে পুরো দলের সাফল্য আসবে না। ভারতের অভিজ্ঞতা ও ঘরের মাঠের সুবিধা এই ম্যাচে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। ২৫ মার্চ হামজা বনাম সুনীলের এই দ্বৈরথে কে জিতবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।