উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের একটি ছোট্ট পাড়া রবিবার সন্ধ্যায় ‘গঙ্গা-যমুনা তহজিব’-এর এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এখানে রোজা-ইফতারের পর নামাজ এবং তারপর শিব আরতি একের পর এক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে অংশ নিয়েছেন। অবধপুরম কলোনির বাবা অবধেশ্বর নাথ মন্দিরের সামনে শিব বাটিকা পার্কে এই ঘটনা ঘটেছে, যা এই একতার গল্পকে আরও বিশেষ করে তুলেছে।
অবধপুরম ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি রাজেশ তিওয়ারি জানান, এই এলাকার একজন মুসলিম বাসিন্দাই ‘শিব বাটিকা’ নামটি দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, মন্দির নির্মাণে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ও আর্থিক ও শ্রমের মাধ্যমে অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, “এখানে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই একসঙ্গে উৎসব পালন করি, একে অপরের ধর্মীয় আচারে শ্রদ্ধা জানাই। এটাই আমাদের পাড়ার পরিচয়।”
রবিবার সন্ধ্যায় শিব বাটিকা পার্কে প্রথমে রোজা ভাঙার জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি হিন্দু বাসিন্দারাও যোগ দেন। ইফতারের পর মুসলিমরা নামাজ আদায় করেন এবং তারপরই শুরু হয় শিব আরতি। এই আরতিতে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিম বাসিন্দারাও অংশ নেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা, মহম্মদ আলম, বলেন, “আমরা এখানে একে অপরের ধর্মকে সম্মান করি। ইফতারে হিন্দু ভাইয়েরা এসেছিলেন, আর আমরা শিব আরতিতে যোগ দিয়েছি। এটাই আমাদের একতার শক্তি।”
এই ঘটনা লখনউয়ের সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনেছে, যা গঙ্গা-যমুনা তহজিব বা সংমিশ্রিত সংস্কৃতি হিসেবে পরিচিত। এই সংস্কৃতি হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য নিদর্শন। রাজেশ তিওয়ারি আরও বলেন, “এই পাড়ায় আমরা বছরের পর বছর ধরে একসঙ্গে বসবাস করছি। আমাদের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই। মন্দির নির্মাণে যেমন মুসলিমরা সাহায্য করেছে, তেমনই ঈদ বা রমজানে হিন্দুরাও আমাদের সঙ্গে থাকে।” স্থানীয় একজন মহিলা, সুষমা শর্মা, বলেন, “ইফতারে আমরা খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর যখন আরতি হল, মুসলিম প্রতিবেশীরা আমাদের সঙ্গে প্রদীপ জ্বালিয়েছে। এটা দেখে মনে হয় আমরা সত্যিই এক পরিবার।” এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকে এটাকে ভারতের বৈচিত্র্যে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
এই একতার গল্প শুধু অবধপুরম কলোনির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। লখনউ শহর বরাবরই তার সংমিশ্রিত সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। ঐতিহাসিকভাবে এখানে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় একসঙ্গে উৎসব পালন করে এসেছে, যা আজও অটুট রয়েছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা, আব্দুল রহিম, বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, এখানে ধর্ম মানুষকে ভাগ করে না, বরং এক করে। শিব বাটিকায় এই ঘটনা তারই প্রমাণ।”
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে অবধপুরম কলোনি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যখন দেশের কিছু জায়গায় ধর্মীয় বিভেদের ঘটনা শোনা যায়, তখন এই পাড়ার এই উদ্যোগ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। রাজেশ তিওয়ারি বলেন, “আমরা চাই আমাদের এই একতা অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করুক। ধর্ম যেন আমাদের মধ্যে দেয়াল না তৈরি করে, সেতু হয়ে উঠুক।” শিব বাটিকায় এই সন্ধ্যা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল না, বরং ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এটি প্রমাণ করে যে, ভালোবাসা ও সম্মানের মাধ্যমে সম্প্রদায়গুলো একসঙ্গে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারে।