মুম্বই হাইকোর্ট সোমবার অদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড, গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম অদানি এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেশ অদানিকে ৩৮৮ কোটি টাকার বাজার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলা থেকে মুক্তি দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, এই মামলায় প্রতারণা বা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই মামলার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১২ সালে, যখন সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও) অদানি এন্টারপ্রাইজেস এবং এর প্রবর্তকদের বিরুদ্ধে একটি চার্জশিট দাখিল করে। অভিযোগে বলা হয়েছিল, গৌতম ও রাজেশ অদানি শেয়ার বাজারে কারচুপি করে অবৈধভাবে লাভ করেছেন। এসএফআইও-এর দাবি ছিল, অদানিরা স্টক ব্রোকার কেতন পারেখের সঙ্গে মিলে শেয়ারের দামে হেরফের করেছেন, যিনি ১৯৯৮-২০০১ সালের শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির মূল চরিত্র ছিলেন। এতে অদানি গ্রুপের প্রবর্তকরা ৩৮৮.১১ কোটি টাকা এবং পারেখ ১৫১.৪০ কোটি টাকা অবৈধ লাভ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
২০১৪ সালে একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অদানিদের সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে এসএফআইও-এর আবেদনের পর মুম্বইয়ের একটি সেশন কোর্ট এই রায় বাতিল করে দেয় এবং জানায় যে, তদন্তে অদানি গ্রুপের অবৈধ লাভের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপর অদানিরা হাইকোর্টে আবেদন করেন, সেশন কোর্টের আদেশকে ‘অযৌক্তিক ও বেআইনি’ বলে দাবি করে।
সোমবার বিচারপতি রাজেশ এন লঢ্ঢার একক বেঞ্চ সেশন কোর্টের আদেশ খারিজ করে দিয়ে বলেন, “শুধুমাত্র অভিযুক্তের ভুলভাবে লাভের দাবি করে প্রতারণার অপরাধ প্রমাণ করা যায় না, যদি না কোনও নির্দিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতি বা প্রতারণার প্রমাণ থাকে।” আদালত আরও উল্লেখ করেছে, এই মামলায় কোনও ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের তরফে অভিযোগের অভাব লক্ষণীয়।
এই রায় অদানি গ্রুপের জন্য একটি বড় স্বস্তি এনেছে। দীর্ঘ ১২ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর এই মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ায় গৌতম ও রাজেশ অদানি এখন আইনি ঝামেলা ছাড়াই তাঁদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে মনোনিবেশ করতে পারবেন। অদানি গ্রুপের শেয়ার বাজারেও এই রায়ের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিন অদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ার ১.২৬% বেড়ে ২,২৫০ টাকায় বন্ধ হয়েছে। অন্যদিকে, অদানি পোর্টসের শেয়ার ১.৬৩% বৃদ্ধি পেয়ে ১,১৩৭.২০ টাকায় পৌঁছেছে। তবে অদানি পাওয়ারের শেয়ার ০.২৪% কমে ৫১০.৭০ টাকায় শেষ হয়েছে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে অদানি গ্রুপ একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি বাধা অতিক্রম করল। তবে, গৌতম অদানির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলমান একটি মামলা এখনও আলোচনায় রয়েছে, যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ জালিয়াতি ও ঘুষের অভিযোগ উঠেছে। ভারতীয় আইন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে আমেদাবাদের একটি আদালতকে এই সমন পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।