বঙ্গে পলিকার্বনেট প্ল্যান্ট স্থাপনে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের

হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড বঙ্গে পলিকার্বনেট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ₹৮,৭০০ কোটি) বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। এই প্রকল্পের জন্য কোম্পানি তাদের হলদিয়ার বিদ্যমান…

Haldia Petrochemicals

short-samachar

হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড বঙ্গে পলিকার্বনেট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ₹৮,৭০০ কোটি) বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। এই প্রকল্পের জন্য কোম্পানি তাদের হলদিয়ার বিদ্যমান উত্পাদন স্থানে খালি জমি ব্যবহার করবে, যা তাদের রাসায়নিক ডাউনস্ট্রিম ব্যবসায় আরও বৈচিত্র্য আনার প্রমাণ।

   

পলিকার্বনেটের ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয়তা

পলিকার্বনেট একটি গুরুত্বপূর্ণ থার্মোপ্লাস্টিক যৌগ, যা বিশেষ করে অটোমোবাইল এবং প্যাকেজিং শিল্পে ব্যবহৃত হয় তার তাপ, প্রভাব এবং রাসায়নিকের প্রতি স্থায়িত্বের কারণে। বর্তমানে ভারতের বাজারে পলিকার্বনেটের চাহিদা পূরণ করা হয় আমদানি করে। এটি ভারতের রাসায়নিক শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, এবং হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেডের পলিকার্বনেট প্ল্যান্ট দেশের আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

ফেনল ও অ্যাসিটোনের উত্পাদন

পলিকার্বনেটের মূল কাঁচামাল হলো ফেনল এবং অ্যাসিটোন। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড এর পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই দুটি কাঁচামাল তাদের হলদিয়া প্ল্যান্টে উৎপাদন শুরু করবে। কোম্পানি ইতিমধ্যে হলদিয়ায় একটি ফেনল প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করেছে, যা রাসায়নিক ডাউনস্ট্রিম খাতে পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেডের অগ্রগতি এবং বিনিয়োগের অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করবে।

পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেডের ম্যানেজমেন্ট মারফত খবর, “ভারত একটি বড় রাসায়নিক ভোক্তা কেন্দ্র, এবং অনেক রাসায়নিক পণ্য এখনও আমদানি করা হয়। এর মধ্যে একটি পলিকার্বনেট, যা ফেনল থেকে উৎপন্ন একটি ডাউনস্ট্রিম পণ্য। আমরা এখন পলিকার্বনেটের জন্য একটি ইউনিট নির্মাণের কথা ভাবছি,” বলে জানান পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড -এর পুরো সময়ের পরিচালক এবং চিফ এক্সকিউটিভ অফিসার নাভানীত নারায়ণ।

বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি পার্টনারশিপ

এছাড়াও হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেডের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো পলিকার্বনেট প্রযুক্তি পাওয়া। বিশ্বব্যাপী এটি একটি ঘনিষ্ঠভাবে রক্ষা করা প্রযুক্তি, এবং হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেডের ম্যানেজমেন্ট এই প্রযুক্তি অর্জনের জন্য বিশ্বব্যাপী অন্যতম বড় কোম্পানির সঙ্গে একটি পার্টনারশিপ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। পূর্ব এশিয়ার কোম্পানি যেমন আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কম্পানির সাবসিডিয়ারি কভেস্ট্রো, সৌদি আরবের সিয়াউদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি কেমিক্যালস্ এবং জাপান, তাইওয়ানের অন্যান্য কোম্পানিগুলি পলিকার্বনেট উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয়।

অর্থায়ন এবং প্রকল্পের অগ্রগতি

তবে বর্তমানে পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসা একটি ডাউনসাইকেলে রয়েছে এবং হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড লভ্যাংশে নেই, ফলে প্রকল্পটির জন্য অর্থায়ন পাওয়া নির্ভর করবে ঋণদাতাদের মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ লাভের উপর। তবুও, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ আশা করছে যে পলিকার্বনেটের মতো আমদানি প্রতিস্থাপন পণ্যের মাধ্যমে তারা একটি শক্তিশালী ব্যবসা গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

ফেনল এবং অ্যাসিটোন প্ল্যান্টের অগ্রগতি

এই মুহূর্তে, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড ম্যানেজমেন্ট তাদের ফেনল এবং অ্যাসিটোন প্ল্যান্টের কাজ দ্রুত শেষ করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এই ৫,০০০ কোটি টাকার প্ল্যান্টটি ২০২৬ সালের মধ্যে চালু হলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির জন্য একটি বড় প্রভাব ফেলবে এবং নতুন রাসায়নিক ইউনিটগুলির প্রসারণের জন্য সুযোগ তৈরি করবে।

পলিকার্বনেট প্ল্যান্টের ভবিষ্যৎ প্রভাব

হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেডের এই নতুন প্রকল্পটি ভারতের পেট্রোকেমিক্যাল খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। পলিকার্বনেট উৎপাদনের মাধ্যমে তারা দেশের আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম হবে। হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড আশা করছে, তাদের ফেনল এবং অ্যাসিটোন প্ল্যান্ট দেশের বৃহত্তম হবে এবং পলিকার্বনেট প্ল্যান্ট চালু হলে

এটি তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে।
হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেডের পলিকার্বনেট প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা একদিকে যেমন ভারতের রাসায়নিক শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তেমনি এটি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।