Chandrayaan-5 মিশনের জন্য মিলেছে কেন্দ্রের অনুমোদন: ইসরো প্রধানের ঘোষণা

চেন্নাই, ১৬ মার্চ ২০২৫: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন রবিবার জানিয়েছেন, কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি চাঁদ অধ্যয়নের জন্য উচ্চাভিলাষী চন্দ্রযান-৫ মিশনের অনুমোদন দিয়েছে।…

Government Approval for Chandrayaan-5 Mission

short-samachar

চেন্নাই, ১৬ মার্চ ২০২৫: ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র চেয়ারম্যান ভি নারায়ণন রবিবার জানিয়েছেন, কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি চাঁদ অধ্যয়নের জন্য উচ্চাভিলাষী চন্দ্রযান-৫ মিশনের অনুমোদন দিয়েছে। চেন্নাইয়ে একটি অনুষ্ঠানে তাকে ইসরোর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে তিনি বলেন, চন্দ্রযান-৩ মিশনে (Chandrayaan-5 mission) ২৫ কেজি ওজনের ‘প্রজ্ঞান’ রোভার ব্যবহৃত হলেও, চন্দ্রযান-৫ মিশনে চাঁদের পৃষ্ঠ অধ্যয়নের জন্য ২৫০ কেজি ওজনের একটি রোভার পাঠানো হবে।

   

চন্দ্রযান মিশনগুলি চাঁদের পৃষ্ঠ নিয়ে গবেষণার উপর কেন্দ্রীভূত। ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে চাঁদের রাসায়নিক, খনিজ এবং আলোক-ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র তৈরি করেছিল। ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ মিশন ৯৮ শতাংশ সফল হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যায়ে মাত্র ২ শতাংশ লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এবার চন্দ্রযান-৫-এর মাধ্যমে ইসরো চাঁদের গভীরতর গবেষণার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

নারায়ণন জানান, চন্দ্রযান-৫ মিশনটি পূর্ববর্তী মিশনগুলির তুলনায় আরও উন্নত এবং বড় আকারের হবে। চন্দ্রযান-৩-এর রোভার ‘প্রজ্ঞান’ মাত্র ২৫ কেজি ওজনের ছিল এবং এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে গবেষণা চালিয়েছিল। কিন্তু চন্দ্রযান-৫-এর রোভার ২৫০ কেজি ওজনের হবে, যা চাঁদের পৃষ্ঠের আরও বিস্তারিত এবং গভীর অধ্যয়ন সম্ভব করবে। এই রোভার উন্নত প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশে সজ্জিত হবে, যা চাঁদের মাটি, শিলা এবং পরিবেশ সম্পর্কে নতুন তথ্য সংগ্রহ করবে।

ইসরো প্রধান বলেন, “চন্দ্রযান-৫ আমাদের চন্দ্র গবেষণার পরবর্তী ধাপ। আমরা চাঁদ সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে চাই, এবং এই মিশন আমাদের সেই লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাবে।” তিনি আরও জানান, এই মিশনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে এবং এটি ভারতের মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে।

চন্দ্রযান-১ ভারতের প্রথম চন্দ্র মিশন হিসেবে ২০০৮ সালে উৎক্ষেপিত হয়। এটি চাঁদের পৃষ্ঠের রাসায়নিক গঠন এবং খনিজ সম্পদের মানচিত্র তৈরি করে বিশ্বে ভারতের মহাকাশ গবেষণার সক্ষমতা প্রমাণ করেছিল। ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ একটি ল্যান্ডার ও রোভার নিয়ে চাঁদে পাঠানো হয়। যদিও ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ শেষ মুহূর্তে অবতরণে ব্যর্থ হয়, অরবিটারটি এখনও চাঁদের চারপাশে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করছে।

২০২৩ সালে চন্দ্রযান-৩ ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক সাফল্য এনে দেয়। এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম সফল অবতরণকারী মিশন হিসেবে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ‘প্রজ্ঞান’ রোভার চাঁদের মাটিতে জলের অণু এবং অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত করে। এই সাফল্যের পর চন্দ্রযান-৫-এর ঘোষণা ভারতের মহাকাশ গবেষণার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আরও উজ্জ্বল করেছে।

নারায়ণনের এই ঘোষণা ইসরোর বিজ্ঞানীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। একজন ইসরো কর্মকর্তা বলেন, “চন্দ্রযান-৫ আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে আরও এগিয়ে নেবে। ২৫০ কেজি রোভার দিয়ে আমরা চাঁদের অজানা দিকগুলো সম্পর্কে নতুন তথ্য পাব।” বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই মিশন চাঁদে ভবিষ্যৎ মানব অভিযানের জন্যও পথ প্রশস্ত করতে পারে।

চন্দ্রযান-৫-এর অনুমোদনের খবরে ভারতীয়রা গর্বিত। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, “ইসরো আমাদের গর্ব। চন্দ্রযান-৫ চাঁদ সম্পর্কে নতুন দিগন্ত খুলবে।” অনেকে এই মিশনকে ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখছেন। চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের পর জনগণের প্রত্যাশা এখন চন্দ্রযান-৫-এর দিকে।

ইসরোর চেয়ারম্যান জানান, চন্দ্রযান-৫-এর পরিকল্পনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই মিশনের সময়সীমা বা বাজেট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে, এটি ২০৩০-এর আগে উৎক্ষেপণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নারায়ণন বলেন, “আমরা ধাপে ধাপে এগোচ্ছি। চন্দ্রযান-৫ আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কিন্তু আমরা প্রস্তুত।”

ইসরোর অন্যান্য পরিকল্পনার মধ্যে গগনযান মিশনও রয়েছে, যার মাধ্যমে ভারত প্রথমবার মানুষকে মহাকাশে পাঠাবে। চন্দ্রযান-৫-এর সঙ্গে এই মিশনগুলি ভারতকে মহাকাশ গবেষণায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলির মধ্যে নিয়ে যাবে।

চন্দ্রযান-৫-এর জন্য কেন্দ্রের অনুমোদন ভারতের মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ২৫০ কেজি রোভার নিয়ে এই মিশন চাঁদের গোপন রহস্য উন্মোচন করবে এবং ভারতের বিজ্ঞানীদের দক্ষতাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে। চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের পর এই মিশন থেকে জনগণের প্রত্যাশা আকাশচুম্বী। ইসরোর এই পদক্ষেপ ভারতকে মহাকাশে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।