গত পাঁচ বছরে ৪০০ কোটি টাকা ট্যাক্স দিল রাম মন্দির ট্রাস্ট

অযোধ্যা (উত্তরপ্রদেশ), ১৬ মার্চ ২০২৫: শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট (Ram Temple Trust) গত পাঁচ বছরে সরকারকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা কর প্রদান করেছে…

Ram Temple Trust Pays Rs 400 Crore in Taxes Over Five Years Amid Tourism Boom

short-samachar

অযোধ্যা (উত্তরপ্রদেশ), ১৬ মার্চ ২০২৫: শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট (Ram Temple Trust) গত পাঁচ বছরে সরকারকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা কর প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন ট্রাস্টের সেক্রেটারি চম্পত রাই। ধর্মীয় পর্যটনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির মধ্যে এই তথ্য রবিবার প্রকাশ করা হয়েছে। রাই জানান, এই পরিমাণ ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রদান করা হয়েছে।

   

মোট ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে ২৭০ কোটি টাকা পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) হিসেবে দেওয়া হয়েছে, এবং বাকি ১৩০ কোটি টাকা বিভিন্ন অন্যান্য করের আওতায় পরিশোধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এই বিপুল পরিমাণ কর প্রদান অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ এবং তীর্থযাত্রীদের আগমন বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

কর প্রদানের পটভূমি
২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর রাম মন্দির নির্মাণের জন্য শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্ট গঠিত হয়। এরপর থেকে অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়েছে। ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এই ঘটনার পর থেকে অযোধ্যায় তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতি এবং ট্রাস্টের আয়ের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

চম্পত রাই জানান, মন্দির নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণ, পরিষেবা এবং অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য জিএসটি প্রযোজ্য হয়েছে। এছাড়া, ট্রাস্টের বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনে অন্যান্য করও প্রদান করতে হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সরকারের নিয়ম মেনে চলেছি এবং গত পাঁচ বছরে ৪০০ কোটি টাকা কর পরিশোধ করেছি। এর মধ্যে ২৭০ কোটি জিএসটি এবং বাকি ১৩০ কোটি অন্যান্য করের আওতায়।”

ধর্মীয় পর্যটনের উত্থান
রাম মন্দিরের উদ্বোধনের পর অযোধ্যা ভারতের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ভক্ত এখানে রামলালার দর্শনের জন্য আসছেন। উত্তরপ্রদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মন্দির উদ্বোধনের পর প্রথম বছরেই প্রায় ১০ কোটির বেশি তীর্থযাত্রী অযোধ্যায় এসেছেন। এই বিপুল ভিড় স্থানীয় ব্যবসা, হোটেল, পরিবহন এবং অন্যান্য পরিষেবার চাহিদা বাড়িয়েছে, যা থেকে ট্রাস্টও আয় করছে।

এই আয়ের একটি বড় অংশ দান হিসেবে আসলেও, মন্দির নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয়ের জন্য জিএসটি প্রযোজ্য হয়েছে। নির্মাণে ব্যবহৃত পাথর, সিমেন্ট, ইস্পাত এবং শ্রমিকদের পরিষেবার উপর কর দিতে হয়েছে। চম্পত রাই জানান, ট্রাস্ট স্বচ্ছভাবে এই কর পরিশোধ করেছে, যা সরকারের কোষাগারে যোগ হয়েছে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই তথ্য প্রকাশের পর বিজেপি নেতারা ট্রাস্টের স্বচ্ছতা এবং দায়িত্বশীলতার প্রশংসা করেছেন। একজন বিজেপি নেতা বলেন, “এটি প্রমাণ করে যে রাম মন্দির ট্রাস্ট শুধু ধর্মীয় কাজে নয়, দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে।” তবে, বিরোধী দলগুলি এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সমাজবাদী পার্টির এক নেতা বলেন, “ট্রাস্ট যদি এত কর দিচ্ছে, তবে তাদের আয় এবং ব্যয়ের হিসেব জনসমক্ষে আনা উচিত। এটা জনগণের দানের টাকা, সরকারের নয়।”
ধর্মীয় মহলেও এই খবর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মন্দিরের মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উপর জিএসটি আরোপ করা উচিত নয়। তবে, অন্যরা বলছেন, আধুনিক সময়ে এই ধরনের কর আইনের অংশ এবং এটি অর্থনীতির জন্য উপকারী।

অযোধ্যার অর্থনৈতিক প্রভাব
রাম মন্দিরের কারণে অযোধ্যায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষণীয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তীর্থযাত্রীদের আগমনে তাদের আয় দ্বিগুণ হয়েছে। হোটেল, দোকান এবং পরিবহন ব্যবস্থা নতুন করে গড়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশ সরকারও অযোধ্যাকে একটি আন্তর্জাতিক তীর্থস্থান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিমানবন্দর, রেল সংযোগ এবং রাস্তার উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। এই কর প্রদানের মাধ্যমে ট্রাস্ট পরোক্ষভাবে এই উন্নয়নে অবদান রাখছে।

অযোধ্যার তীর্থযাত্রীরা এই খবরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একজন ভক্ত বলেন, “আমরা রামলালার জন্য দান করি, কিন্তু এত টাকা কর হিসেবে চলে যাচ্ছে জেনে মন খারাপ লাগে।” অন্য একজন বলেন, “এটা ভালো যে ট্রাস্ট সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে। এই টাকা দেশের কাজে লাগবে।”
শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টের ৪০০ কোটি টাকা কর প্রদানের খবর অযোধ্যার ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে। এটি একদিকে মন্দিরের আয়ের বিপুলতা দেখায়, অন্যদিকে সরকারের সঙ্গে ট্রাস্টের সহযোগিতার প্রমাণ দেয়। তবে, এই বিষয়ে স্বচ্ছতা এবং জনগণের মতামতের গুরুত্বও উঠে এসেছে। রাম মন্দিরের এই যাত্রা শুধু ধর্মীয় নয়, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকেও আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে।