DVC power modernization: বাংলা-ঝাড়খণ্ডের ‘শিল্প-স্বার্থে’ ১,৫০০ কোটি টাকার মহাপ্রকল্প ডিভিসির

দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC) তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকে আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন করতে ১,৫০০ কোটি টাকার একটি মহাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল…

DVC west bengal Power Supply Network

short-samachar

দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC) তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকে আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন করতে ১,৫০০ কোটি টাকার একটি মহাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল চব্বিশ ঘণ্টা উন্নত মানের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং সামগ্রিক প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক (এটি অ্যান্ড সি) ক্ষতি হ্রাস করা। রবিবার এক ডিভিসি আধিকারিক পিটিআইকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

   

ডিভিসি’র বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা মূলত শিল্পক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীল। সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এর সরবরাহ নগণ্য। তবে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ডিভিসি তাদের পরিষেবার মানকে আরও উন্নত করতে এবং প্রযুক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ বিতরণে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে প্রস্তুত। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের ২৪,২৩৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ডিভিসি’র কমান্ড এরিয়ায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।

এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল প্রথাগত বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা থেকে সরে এসে একটি অত্যাধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এর ফলে ডিভিসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় প্রাথমিক ও গৌণ বিতরণ নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী এবং দক্ষ হবে। আধিকারিকদের মতে, এই উদ্যোগ শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্ভরযোগ্যতা বাড়াবে না, বরং শিল্পক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের শিল্পাঞ্চলগুলি দীর্ঘদিন ধরে ডিভিসি’র বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর নির্ভর করে আসছে। তবে, পুরনো বিতরণ ব্যবস্থার কারণে কখনও কখনও বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন এবং প্রযুক্তিগত ক্ষতির সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেই সমস্যাগুলির সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিতরণে সামগ্রিক প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক ক্ষতি (এটি অ্যান্ড সি লস) একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ চুরি, মিটারে গরমিল, এবং বিতরণের সময় প্রযুক্তিগত কারণে বিদ্যুৎ নষ্ট হওয়া। ডিভিসি’র এই প্রকল্পে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার পরিকল্পনা রয়েছে।

আধিকারিকদের মতে, নতুন ব্যবস্থায় স্মার্ট মিটারিং, রিয়েল-টাইম মনিটরিং, এবং উন্নত গ্রিড ব্যবস্থাপনার মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এর ফলে বিদ্যুৎ বিতরণে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে। এটি শুধু ডিভিসি’র আর্থিক ক্ষতি রোধ করবে না, বরং শিল্পগুলির জন্য বিদ্যুৎ খরচও আরও দক্ষ ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠবে।

ডিভিসি’র বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রধানত শিল্পক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ডিভিসি’র বিদ্যুৎ সরবরাহ উৎপাদনের মূল চালিকাশক্তি। এই প্রকল্পের ফলে শিল্পগুলি নিরবচ্ছিন্ন ও উন্নতমানের বিদ্যুৎ পাবে, যা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা এবং প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

বিশেষ করে ঝাড়খণ্ডের খনি ও ইস্পাত শিল্প এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন উৎপাদন কারখানাগুলি এই প্রকল্প থেকে সরাসরি উপকৃত হবে। শিল্প সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে এবং বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে সাহায্য করবে।

এই প্রকল্পে শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহের আধুনিকীকরণই নয়, পরিবেশগত স্থায়িত্বের উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। আধুনিক গ্রিড ব্যবস্থা এবং ক্ষতি হ্রাসের মাধ্যমে বিদ্যুতের অপচয় কমানো হবে, যা পরোক্ষভাবে পরিবেশের উপর চাপ কমাবে। পাশাপাশি, ডিভিসি ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ সংযোজনের পরিকল্পনাও বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।

ডিভিসি আধিকারিকদের মতে, এই ১,৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে। প্রথমে বিদ্যুৎ বিতরণের মূল অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে নতুন সাব-স্টেশন স্থাপন, ট্রান্সমিশন লাইন আধুনিকীকরণ এবং স্মার্ট গ্রিড স্থাপন। এরপর গৌণ বিতরণ ব্যবস্থায় প্রযুক্তি সংযোজন করা হবে।

প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে, তবে এর প্রভাব ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ডিভিসি’র লক্ষ্য হল এই প্রকল্পের মাধ্যমে পূর্ব ভারতের শিল্পাঞ্চলগুলির জন্য একটি আদর্শ বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিল্পপতি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তবে, কিছু পরিবেশবিদ মনে করছেন, প্রকল্পে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের উপর আরও জোর দেওয়া উচিত। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই প্রকল্প নিয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, যদিও ডিভিসি’র সরবরাহ মূলত শিল্পকেন্দ্রিক হওয়ায় সাধারণ গ্রাহকদের উপর এর সরাসরি প্রভাব কম হবে।

ডিভিসি’র এই ১,৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প পূর্ব ভারতের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে শিল্পক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করে তুলে এই প্রকল্প অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ কতটা সফল হয়, তা সময়ই বলবে। তবে, এটি নিঃসন্দেহে ডিভিসি’র দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।