মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে, যার ফলে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে এবং ১০১ জন আহত হয়েছে। হুথি বিদ্রোহীদের কাছে এই হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যেখানে বেশিরভাগ মৃত ব্যক্তি নারী ও শিশু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুথিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “তাদের সময় শেষ, তাদের আক্রমণ আজ থেকে বন্ধ হওয়া উচিত।”
হামলাগুলি ইয়েমেনের রাজধানী সানা, হুথি অধ্যুষিত সাদা, আল বায়দা, এবং রদা এলাকায় সংগঠিত হয়েছিল। হামলার পর, হুথিদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায় যে, ৩১ জন নিহত হয়েছে এবং ১০১ জন আহত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। প্রথমবারের মতো ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এই ধরনের হামলা হয়েছে, যেগুলি ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পর ইয়েমেন থেকে লঞ্চ করা জাহাজে হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঘটেছে। হুথি বিদ্রোহীরা এসব হামলার জন্য নিজেদের দায়ী করেছে এবং বলেছে যে তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এই হামলা চালাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুথিদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় বলেন, “তাদের আক্রমণ আজ থেকেই বন্ধ হওয়া উচিত, না হলে তারা এমন একটি প্রতিক্রিয়া পাবে যা তারা কখনোই কল্পনাও করতে পারেনি।” তিনি হুথিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “তাদের জন্য যে কোনো দয়া নেই, তাদের আক্রমণ থামাতে হবে, এবং তারা যদি তা না করে, তাহলে আগুনের মতো বিপর্যয় তাদের উপর নেমে আসবে।” ট্রাম্প হুথিদের পৃষ্ঠপোষক দেশ ইরানকেও সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “ইরানকে এখনই হুথিদের সমর্থন বন্ধ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “তারা যদি আমেরিকান জনগণ, তাদের প্রেসিডেন্ট অথবা বিশ্বব্যাপী শিপিং লেনকে হুমকি দেয়, তাহলে তাদের জন্য মারাত্মক পরিণতি অপেক্ষা করছে।”
এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাচি এই হামলার পর এক টুইটে লিখেছেন, “মার্কিন সরকার ইরানের বৈদেশিক নীতির নির্দেশ দেওয়ার কোনো অধিকার বা অধিকার নেই।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলের গণহত্যা এবং সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করো। ইয়েমেনের জনগণের মৃত্যু বন্ধ করো।” হুথিরা গত এক দশকে ইয়েমেনের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসলেও, তাদের আক্রমণগুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে বিশেষ করে যখন তারা ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সময়ে, ইয়েমেন উপকূলের কাছাকাছি জাহাজে আক্রমণ শুরু করে। এই হামলাগুলি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ও শিপিং সেক্টরে বিশাল বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
মার্কিন হামলাগুলির পর, হুথিরা তাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জানায় যে, তারা এই হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী “উত্তেজনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে উত্তেজনা বাড়াতে প্রস্তুত।” ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি এবং মার্কিন হামলা এই অঞ্চল এবং বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সম্পর্কের জন্য আরও একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, যদি ইরান এবং হুথিরা মার্কিন শর্তগুলি মেনে না চলে, তবে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে। ইরান, যেটি হুথিদের সমর্থন দিচ্ছে, তাদের দিক থেকে এই হামলার প্রতিক্রিয়া সম্ভাব্য এবং তারা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে পারে। আগামী দিনে এটি দেখার বিষয় হবে যে, এই সংকট আরও কীভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। বর্তমানে ইয়েমেনের পরিস্থিতি অনেকটাই অস্পষ্ট, কিন্তু মার্কিন হামলা এবং ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি এ অঞ্চলে আরও একটি বড় যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করছে।