Malda panchayat clash: জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষের জেরে পঞ্চায়েত কর্মকর্তা খুন

মালদা (Malda) জেলায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে এক পঞ্চায়েত কর্মকর্তা ছুরিকাঘাতে নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছেন। শনিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে হিরানন্দপুর…

Panchayat Official Killed

short-samachar

মালদা (Malda) জেলায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে এক পঞ্চায়েত কর্মকর্তা ছুরিকাঘাতে নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছেন। শনিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে হিরানন্দপুর এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ চন্দীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি কমল মণ্ডল এই সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি ফেকান মণ্ডলের পরিবারের সঙ্গে জমির দখল নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন, যা পরে ভয়াবহ রূপ নেয়।

   

একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হিরানন্দপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে জমির মালিকানা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। শনিবার সকালে এই বিরোধ হাতাহাতি এবং পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কমল মণ্ডল এই জমি সংক্রান্ত বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তাঁকে লক্ষ্য করে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করা হয়। এই হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। এছাড়া, সংঘর্ষে জড়িত আরও ছয়জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এই সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি লাঠি ও অন্যান্য হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তদন্ত শুরু হয়েছে এবং কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। মালদার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, “আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, জমির দখল নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধই এই সংঘর্ষের কারণ। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হিরানন্দপুরে জমি নিয়ে বিরোধ নতুন নয়। এই এলাকায় কৃষিজমির মালিকানা এবং সীমানা নিয়ে প্রায়ই উত্তেজনা দেখা দেয়। কমল মণ্ডল গ্রাম পঞ্চায়েতের একজন পরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি স্থানীয় সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। তাঁর মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একজন গ্রামবাসী বলেন, “কমলদা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তিনি শান্তি ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এভাবে তাঁকে হারাতে হবে ভাবিনি।”

এই ঘটনা মালদায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের গভীরতা এবং এর ভয়াবহ পরিণতির দিকে আলোকপাত করেছে। জমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে প্রায়ই স্থানীয় প্রশাসন ও পঞ্চায়েত কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতা করতে হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা মৃত্যু এবং রক্তপাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের একজন নেতা বলেন, “এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা। জমি নিয়ে বিরোধ মেটাতে আমাদের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।” অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

মালদার ইতিহাসে জমি সংক্রান্ত সংঘর্ষ নতুন নয়। গত কয়েক বছরে এই জেলায় এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে স্থানীয় মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জমির মালিকানার স্পষ্ট দলিল এবং সঠিক সমীক্ষার অভাব এই ধরনের বিরোধের অন্যতম কারণ। এছাড়া, গ্রামীণ এলাকায় প্রশাসনিক তৎপরতার ঘাটতিও এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে।

এই ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে। পঞ্চায়েত কর্মকর্তার মৃত্যু এবং সংঘর্ষে আহতদের ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনার পেছনের পূর্ণাঙ্গ কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করছে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করছে।

এই ঘটনা শুধু মালদার জন্যই নয়, গোটা রাজ্যের জন্য একটি সতর্কবার্তা। জমি সংক্রান্ত বিরোধ সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন এবং পঞ্চায়েতের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। কমল মণ্ডলের মৃত্যু গ্রামীণ সমাজে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে।