হরিয়ানার সোনিপত জেলায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় স্থানীয় বিজেপি নেতা সুরেন্দ্র জওয়াহার গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছেন। পুলিশ শনিবার জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে একটি চলমান জমি বিরোধের কারণ রয়েছে। নিহত সুরেন্দ্র জওয়াহার সোনিপতের মুণ্ডলানা মণ্ডলের বিজেপি সভাপতি ছিলেন এবং গ্রামের ‘নামবারদার’ বা মাথাও ছিলেন। নামবারদার হিসেবে তিনি জমির রাজস্ব সংগ্রহ এবং রেকর্ড রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতেন। এই ঘটনা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে, ১৪ মার্চ, জওয়াহার গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুরেন্দ্র জওয়াহারকে অজ্ঞাতপরিচয় এক আততায়ী রাত প্রায় ৯:৩০ টার দিকে গুলি করে হত্যা করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, জওয়াহার প্রাণ বাঁচাতে একটি দোকানে ঢুকে পড়েন, কিন্তু আততায়ী তাকে তাড়া করে গিয়ে সেখানেই গুলি করে। ফুটেজে শোনা যায়, জওয়াহার চিৎকার করে বলছেন, “মার দিয়া, মার দিয়া” (আমাকে মেরে ফেলেছে)। এরপর আততায়ী তাকে কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই জওয়াহারের মৃত্যু হয়।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে একটি দীর্ঘদিনের জমি বিরোধ রয়েছে। জওয়াহার একটি জমি কিনেছিলেন, যা আততায়ীর আত্মীয়দের নামে নথিভুক্ত ছিল। এই জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। পুলিশ জানিয়েছে, আততায়ী জওয়াহারকে আগেই সতর্ক করেছিল যেন তিনি জমিতে পা না দেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে জওয়াহার যখন জমি পরিষ্কার করতে যান, তখন আততায়ী তার উপর হামলা করে। গোহানা এসিপি (ক্রাইম) ঋষিকান্ত বলেন, “গতকাল আমরা খবর পাই যে জওয়াহার গ্রামে গুলি চলেছে এবং নামবারদার সুরেন্দ্রকে গুলি করা হয়েছে। এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং তিনটি দল গঠন করা হয়েছে। আততায়ীকে শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।”
সোনিপত পুলিশ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করেছে। জওয়াহারের স্ত্রী কোমলের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ তিনটি দল গঠন করে আততায়ীকে ধরতে তল্লাশি শুরু করেছে। জওয়াহারের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এসিপি ঋষিকান্ত জানিয়েছেন, “আমরা জানতে পেরেছি, নিহত ব্যক্তি তার আত্মীয়দের কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। এই জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।” তিনি আরও বলেন, আততায়ী শীঘ্রই গ্রেফতারের আওতায় আসবে।
এই ঘটনা বিজেপি দলের মধ্যে শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতারা জওয়াহারের হত্যার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং দোষীকে দ্রুত শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একজন দলীয় নেতা বলেন, “সুরেন্দ্র জওয়াহার আমাদের দলের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী ছিলেন। তাঁর এইভাবে খুন হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।” গ্রামবাসীরাও এই ঘটনায় হতবাক। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “তিনি আমাদের গ্রামের একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। এমন ঘটনা আমাদের কাছে অকল্পনীয়।”
এই হত্যাকাণ্ড হরিয়ানায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দলগুলি বিজেপি শাসিত রাজ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির অভিযোগ তুলেছে। একজন বিরোধী নেতা বলেন, “বিজেপি নিজেদের নেতাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে?”
জমি বিরোধের জেরে এমন হত্যাকাণ্ড গ্রামীণ সমাজে উত্তেজনা এবং ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ সমাধানে আইনি ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এই ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী। একজন সমাজবিজ্ঞানী বলেন, “জমি নিয়ে বিরোধ গ্রামীণ ভারতে একটি সাধারণ সমস্যা। এটি সমাধানে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
সুরেন্দ্র জওয়াহারের হত্যাকাণ্ড হরিয়ানার সোনিপত জেলায় একটি গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। পুলিশ তদন্তে আততায়ীর পরিচয় এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ চিত্র সামনে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ঘটনা জমি বিরোধের ভয়াবহ পরিণতির একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। আপাতত, গ্রামবাসী এবং বিজেপি কর্মীরা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। এই ঘটনা রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার তুলে ধরেছে।