West Bengal heatwave alert: আগামী মঙ্গল পর্যন্ত রাঢ়বাংলার প্রবল তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে আগামী ১৮ মার্চ পর্যন্ত তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি (West Bengal heatwave aler) বিরাজ করতে পারে বলে শনিবার ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে। দিন ও…

IMD warns of heatwave in West Bengal's western districts till March 1

short-samachar

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে আগামী ১৮ মার্চ পর্যন্ত তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি (West Bengal heatwave aler) বিরাজ করতে পারে বলে শনিবার ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। তবে, ২০ মার্চ থেকে গাঙ্গেয় অঞ্চলে বৃষ্টি বা বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে আবহাওয়া বিভাগ সামান্য স্বস্তির আশা দিয়েছে।

   

আইএমডি-র পূর্বাভাস অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূম জেলায় ১৮ মার্চ পর্যন্ত তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। এই সময়ে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকতে পারে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি। রাতের তাপমাত্রাও বেশ গরম থাকবে, যা স্থানীয়দের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, পশ্চিমী শুষ্ক বায়ুপ্রবাহ এবং আর্দ্রতার অভাবের কারণে এই তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। পশ্চিম জেলাগুলিতে গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাঁকুড়ায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আইএমডি-র আঞ্চলিক কেন্দ্রের একজন আধিকারিক বলেন, “এই তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন বাড়তে পারে। তবে ২০ মার্চ থেকে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।”

কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলেও তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। শনিবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

এই তাপপ্রবাহের ফলে পশ্চিম জেলাগুলির জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। বাঁকুড়ার একজন বাসিন্দা বলেন, “দিনের বেলা বাইরে বেরোনো কঠিন হয়ে পড়েছে। গরমে শরীর অসুস্থ লাগছে।” পশ্চিম মেদিনীপুরে কৃষকরা জানিয়েছেন, এই অসময়ের গরমে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ধান এবং সবজি চাষে জলের অভাব দেখা দিতে পারে। স্থানীয় বাজারগুলিতে দিনের বেলা লোকসমাগম কমে গেছে, কারণ মানুষ গরম এড়াতে বাড়িতে থাকছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই গরমে হিটস্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, “প্রচুর পানি পান করুন, হালকা পোশাক পরুন এবং দুপুরের তীব্র রোদে বাইরে না বেরোনোর চেষ্টা করুন।” স্কুলগুলিতেও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাপপ্রবাহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে জরুরি ওষুধ এবং ওআরএস সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে জনসাধারণের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। স্থানীয় পঞ্চায়েতগুলিকে গ্রামে সচেতনতা বাড়াতে বলা হয়েছে।

আইএমডি-র পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০ মার্চ থেকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের গাঙ্গেয় অঞ্চলে বৃষ্টি বা বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড় হতে পারে। এতে তাপমাত্রা কিছুটা কমে ৩৫ ডিগ্রির নিচে নামতে পারে। বীরভূম এবং পশ্চিম বর্ধমানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, “এই বৃষ্টি তাপপ্রবাহের তীব্রতা কমাবে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে।” তবে উত্তরবঙ্গে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকবে এবং সেখানে বৃষ্টির সম্ভাবনা কম।

এই অসময়ে তাপপ্রবাহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক ওঠানামা বেড়েছে। একজন পরিবেশবিদ বলেন, “মার্চ মাসে এমন তাপপ্রবাহ আগে খুব কম দেখা গেছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফল হতে পারে।” তবে, এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম জেলাগুলিতে আগামী কয়েকদিন তাপপ্রবাহের কারণে জনজীবনে অসুবিধা হলেও, ২০ মার্চ থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা স্বস্তির আশা জাগিয়েছে। সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। তবে, এই ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আরও সচেতনতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। আপাতত, পশ্চিম জেলার বাসিন্দারা গরম থেকে বাঁচতে সতর্কতা অবলম্বন করছেন।