Dr Ambedkar statue theft: স্থাপনের দুদিনের মধ্যেই চুরি ড. আম্বেদকরের মূর্তি

মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) ছত্রপুর জেলার একটি গ্রামে ভারতীয় সংবিধানের প্রধান স্থপতি ড. ভীমরাও আম্বেদকরের (Dr Ambedkar) একটি মূর্তি স্থাপনের মাত্র দুদিনের মধ্যে চুরি হয়ে গেছে।…

Dr B R Ambedkar Statue Stolen from Madhya Pradesh

short-samachar

মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) ছত্রপুর জেলার একটি গ্রামে ভারতীয় সংবিধানের প্রধান স্থপতি ড. ভীমরাও আম্বেদকরের (Dr Ambedkar) একটি মূর্তি স্থাপনের মাত্র দুদিনের মধ্যে চুরি হয়ে গেছে। এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ চুরির মামলা দায়ের করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। গ্রামবাসীদের মধ্যে এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বাড়ি গ্রামে একটি খোলা জায়গায় পীঠের ওপর মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছিল। মূর্তিটির উচ্চতা ছিল দেড় ফুট।

   

ছত্রপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে গড়ি মালহারা থানার অধীনে বাড়ি গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট ভেদিতা দাগর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “আমরা বাড়ি গ্রামে ড. আম্বেদকরের মূর্তি চুরির একটি অভিযোগ পেয়েছি। মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।” তিনি আরও বলেন, পুলিশ এই ঘটনার পেছনের কারণ ও জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে তৎপর।

গ্রামের সরপঞ্চ আশারাম অহিরওয়ার জানিয়েছেন, গ্রামবাসীরা ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে উত্তরপ্রদেশ থেকে এই মূর্তি কিনে এনেছিল। “মূর্তিটি পাথরের তৈরি এবং ১৮ ইঞ্চি উচ্চতার ছিল। এটি গ্রামে মাত্র দুদিন আগে স্থাপন করা হয়েছিল,” তিনি বলেন। সরপঞ্চের দাবি, পুলিশ ইতিমধ্যে এই চুরির ঘটনায় দুজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে পুলিশের তরফে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি।

Also Read | অগ্নিবীর নিয়োগের জন্য আবেদন শুরু, অষ্টম-দশম উত্তীর্ণরা আবেদন করতে পারবেন  

ড. ভীমরাও আম্বেদকর, যিনি ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা হিসেবে পরিচিত, ১৮৯১ সালের ১৪ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর জেলার মহু ক্যান্টনমেন্টে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সামাজিক ন্যায়বিচার ও দলিত সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য অবদান ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তাই তাঁর মূর্তি চুরির এই ঘটনা শুধু একটি সম্পত্তি হারানোর ঘটনা নয়, বরং গ্রামবাসীদের জন্য এটি একটি আবেগপ্রবণ বিষয়।

বাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মূর্তিটি স্থাপনের সময় থেকেই কিছু ব্যক্তি এর বিরোধিতা করছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মূর্তিটি যে জমিতে স্থাপন করা হয়েছিল, সেই জমি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি জমিটির দখল নেওয়ার চেষ্টা করছিল, এবং এই চুরি তারই একটি অংশ হতে পারে। এই ঘটনার পর গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভীম আর্মি ও বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি তুলেছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই তদন্ত শুরু হয়েছে। স্থানীয় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট ভেদিতা দাগর বলেন, “আমরা এই ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। তদন্তে দ্রুত অগ্রগতি হবে এবং অপরাধীদের ধরা হবে।” তবে গ্রামবাসীদের একাংশ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের মতে, মূর্তি স্থাপনের সময় থেকে বিরোধিতার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এই ঘটনা রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভীম আর্মির নেতারা এটিকে দলিত সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখছেন। একজন নেতা বলেন, “ড. আম্বেদকর আমাদের গর্ব। তাঁর মূর্তি চুরি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব।” বিএসপি নেতারাও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং সরকারের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, স্থানীয় প্রশাসন এই ঘটনাকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে।”

ড. আম্বেদকরের মূর্তি চুরির এই ঘটনা শুধু একটি সাধারণ চুরির ঘটনা নয়। এটি ভারতের গ্রামীণ সমাজে জাতিগত ও সামাজিক উত্তেজনার একটি প্রতিফলন। আম্বেদকরের আদর্শ ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ভারতের দলিত ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের কাছে গভীরভাবে প্রোথিত। তাই এই ধরনের ঘটনা স্থানীয়ভাবে বড় আকারের আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার পেছনে জমি বিতর্ক বা স্থানীয় রাজনীতির হাত থাকতে পারে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে জমিটি দখলের চেষ্টা করছিলেন। মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামবাসীরা জমিটির ওপর তাঁদের দাবি জোরদার করতে চেয়েছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে চুরির ঘটনা একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

এই ঘটনার পর গ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া এখন পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, যদি দ্রুত বিচার না হয়, তবে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটতে পারেন। ভীম আর্মি ও বিএসপি ইতিমধ্যে এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করার ইঙ্গিত দিয়েছে।

মধ্যপ্রদেশে আম্বেদকরের জন্মস্থানের কাছাকাছি এই ধরনের ঘটনা ঘটায় রাজ্য সরকারের ওপরও চাপ বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, আগামী দিনে এই ঘটনা বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিতে পারে।

এই মুহূর্তে বাড়ি গ্রামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত রয়েছে। সবার চোখ এখন পুলিশের তদন্তের দিকে। ড. আম্বেদকরের মূর্তি চুরির এই ঘটনা কীভাবে সমাধান হয়, তা ভারতের গ্রামীণ সমাজে ন্যায়বিচার ও সমতার প্রশ্নকে নতুন করে সামনে আনবে।