হোলি সত্ত্বেও CBSE দ্বাদশ শ্রেণির হিন্দি পরীক্ষা ১৫ মার্চেই

কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (CBSE) জানিয়েছে যে, দ্বাদশ শ্রেণির হিন্দি কোর (৩০২) এবং হিন্দি ইলেকটিভ (০০২) পরীক্ষা নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ১৫ মার্চ ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হবে,…

CBSE Class XII Hindi Board Exam on March 15, 2025

short-samachar

কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (CBSE) জানিয়েছে যে, দ্বাদশ শ্রেণির হিন্দি কোর (৩০২) এবং হিন্দি ইলেকটিভ (০০২) পরীক্ষা নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ১৫ মার্চ ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হবে, যদিও দেশের কিছু অঞ্চলে সেদিন হোলি উৎসবের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, যে ছাত্রছাত্রীরা এই দিনে পরীক্ষায় অংশ নিতে সমস্যার সম্মুখীন হবেন, তাঁদের জন্য পরে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এই সুযোগ জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের জন্য দেওয়া বিশেষ পরীক্ষার মতোই হবে। সিবিএসই শিক্ষার অখণ্ডতা এবং ছাত্রদের কল্যাণের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের উপর জোর দিয়েছে।

   

১৩ মার্চের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিবিএসই জানিয়েছে, “বোর্ড পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা তিন মাস আগে করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, যাতে তারা তাদের পড়াশোনার সময়সূচি কার্যকরভাবে পরিকল্পনা করতে পারে। এই পদক্ষেপ ছাত্রদের সময় ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করেছে এবং তাদের পড়াশোনায় আরও সংগঠিত ও দক্ষ হতে উৎসাহিত করেছে। এই সময়সূচি অনুযায়ী, দ্বাদশ শ্রেণির হিন্দি কোর (৩০২) এবং হিন্দি ইলেকটিভ (০০২) পরীক্ষা ১৫ মার্চ ২০২৫-এ নির্ধারিত রয়েছে।”

Also Read | উচ্চ মাধ্যমিকে ৬ জন পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ, শিক্ষা সংসদের কড়া পদক্ষেপ 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, “সিবিএসই-কে জানানো হয়েছে যে, দেশের বেশিরভাগ অংশে হোলি উৎসব ১৪ মার্চ ২০২৫-এ পালিত হলেও, কিছু কিছু জায়গায় এই উৎসব ১৫ মার্চে হবে বা ১৪ মার্চের উৎসব সেদিন পর্যন্ত চলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কিছু ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, পরীক্ষা ১৫ মার্চেই অনুষ্ঠিত হবে, তবে যাঁরা এই দিনে পরীক্ষা দিতে অসুবিধা বোধ করবেন, তাঁরা সেদিন না দিয়ে পরে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এই সুযোগটি বোর্ডের নীতি অনুযায়ী বিশেষ পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা হবে, যেমনটি জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য করা হয়।”

হোলি ভারতের একটি প্রধান উৎসব, যা রং, সঙ্গীত এবং ঐতিহ্যের মাধ্যমে সারা দেশে পালিত হয়। এই উৎসব মন্দের উপর ভালোর জয়ের প্রতীক। মন্দির থেকে রাস্তাঘাট, সর্বত্র প্রাণবন্ত রং আর আনন্দময় সমাবেশে ভরে ওঠে। অনেক রাজ্যে হোলিকা দহনের মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়, যা ভক্তি ও ধার্মিকতার জয়ের প্রতীক। মথুরা এবং বৃন্দাবনে, যেখানে হোলি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়, ভক্তরা ঐতিহ্যবাহী লঠ্ঠমার হোলি সহ বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান শুরু করেছেন। বারাণসী, জয়পুর এবং দিল্লির মতো শহরগুলোতে উৎসাহী জনতা একে অপরকে রং মাখিয়ে এবং গুজিয়া, থান্ডাইয়ের মতো উৎসবের খাবার উপভোগ করে উদযাপন করছেন। শান্তিপূর্ণ উৎসব নিশ্চিত করতে প্রধান শহরগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ১৫ মার্চের পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, হোলির উৎসবের মধ্যে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি এবং পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে সিবিএসই-এর এই বিশেষ ব্যবস্থা ছাত্রদের জন্য স্বস্তির বিষয় হয়ে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হোলির উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই উৎসব মানুষের জীবনে নতুন উৎসাহ ও শক্তি আনবে এবং জাতীয় ঐক্যকে আরও মজবুত করবে। এক্স-এ তিনি লিখেছেন, “আপনাদের সবাইকে হোলির শুভেচ্ছা। আনন্দ ও উৎসাহে ভরা এই উৎসব প্রত্যেকের জীবনে নতুন শক্তি ও উদ্দীপনা আনবে এবং দেশবাসীর মধ্যে ঐক্যের রং আরও গাঢ় করবে।” তাঁর এই বার্তা উৎসবের সময়ে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে।

সিবিএসই-এর এই সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিন মাস আগে পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করা ছাত্রদের পড়াশোনার পরিকল্পনায় সাহায্য করেছে। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এই দীর্ঘ সময়সূচিতে প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত বিরতি দেওয়া হয়েছে, যাতে ছাত্ররা ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে। হিন্দি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা ছাত্রদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

একজন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী, সুপ্রিয়া দাস (নাম পরিবর্তিত), বলেন, “হোলির দিনে পরীক্ষা হওয়ায় আমি চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু এখন যে পরে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাব, তাতে আমার মন থেকে অনেক চাপ কমেছে। আমি এখন উৎসব উপভোগ করতে পারব এবং পরে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারব।” অন্যদিকে, কিছু অভিভাবক মনে করেন, পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হলে আরও ভালো হতো। তবে বেশিরভাগই এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট।

হোলি শুধু একটি উৎসব নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই দিনে মানুষ পুরোনো শত্রুতা ভুলে একে অপরের সঙ্গে রং মেখে আনন্দ করে। গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্র এই উৎসবের উৎসাহ দেখা যায়। মথুরার লঠ্ঠমার হোলি বা বারাণসীর ঐতিহ্যবাহী উদযাপন—প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব রীতি এই উৎসবকে আরও সমৃদ্ধ করে। এই সময়ে পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছাত্রদের জন্য চাপের হতে পারে, তবে সিবিএসই-এর নমনীয়তা এই দ্বন্দ্ব কমাতে সাহায্য করবে।

সিবিএসই জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য শিক্ষার মান বজায় রাখার পাশাপাশি ছাত্রদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। ২০২৫ সালের বোর্ড পরীক্ষায় ৪৪ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রী অংশ নিচ্ছেন, যা ভারতের ৮,০০০ স্কুল এবং বিদেশের ২৬টি দেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য কঠোর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ছাত্রদের স্কুল ইউনিফর্ম পরতে হবে, এবং মোবাইল ফোন, স্মার্টওয়াচের মতো নিষিদ্ধ জিনিস পরীক্ষাকেন্দ্রে আনা যাবে না।

সিবিএসই-এর এই সিদ্ধান্ত ছাত্রদের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান। হোলির আনন্দে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তারা তাদের শিক্ষাগত লক্ষ্যের দিকেও এগিয়ে যেতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা এবং বোর্ডের নমনীয়তা এই উৎসবকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে। ছাত্ররা এখন উৎসবের রঙে মেতে উঠতে পারবে, এবং প্রয়োজনে পরে পরীক্ষা দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে।