২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir) তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা শুরু করেছেন। বর্তমানে ভারতীয় খেলোয়াড়রা আইপিএল ২০২৫-এর জন্য তাদের নিজ নিজ দলে যোগ দিয়েছেন। তবে ভারতীয় দলের পরবর্তী বড় লক্ষ্য হল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গম্ভীর এই সিরিজের আগে ভারত ‘এ’ দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
গৌতম গম্ভীরের কোচিংয়ের অধীনে ভারতীয় টেস্ট দল গত কয়েক মাসে কঠিন সময় পার করেছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। গত বছর নিউজিল্যান্ডের কাছে ঘরের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে হেরে ভারত তাদের প্রথম টেস্ট সিরিজ হারের স্বাদ পায়। এরপর অস্ট্রেলিয়া সফরে রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতীয় দল আরও একটি ধাক্কা খায়। প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ভারতকে ৩-১ ব্যবধানে পরাজিত করে। এই হারের ফলে ২০২৩-২৫ আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার স্বপ্নও ভেঙে যায়। এই পরিস্থিতিতে গম্ভীরের কোচিং দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইংল্যান্ড সফরের জন্য বড় পরিকল্পনা
টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর গম্ভীর এখন ইংল্যান্ড সফরের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি এই বছরের জানুয়ারি থেকেই এই সফরের জন্য পরিকল্পনা শুরু করেছেন। তিনি চান এই সিরিজ দিয়ে ভারতীয় টেস্ট দলের প্রত্যাবর্তন শুরু হোক। বিসিসিআই-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, “অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পর থেকেই গম্ভীর বিসিসিআই-এর সঙ্গে আলোচনা করছেন। তিনি ভারত ‘এ’ দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে যেতে চান, যাতে রিজার্ভ খেলোয়াড়দের আরও কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁর জেদের কারণে কিছু ওয়াইল্ড কার্ড খেলোয়াড় দলে এসেছিল, যারা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখন তিনি ভবিষ্যতে আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইতে পারেন।”
Also Read | ISL 2025: সেমিফাইনালে নিশ্চিত বাগান-গোয়া, প্লে-অফের লড়াইয়ে নতুন নিয়ম?
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গম্ভীর হবেন প্রথম ভারতীয় প্রধান কোচ, যিনি উন্নয়নশীল দলের সঙ্গে বিদেশ সফরে যাবেন। ঐতিহ্যগতভাবে, ভারত ‘এ’ দলের সফরে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (এনসিএ) থেকে কোচ নিয়োগ করা হয়। তবে গম্ভীর নিজে এই দায়িত্ব নিতে চান, যা তাঁর প্রতিশ্রুতি এবং দূরদর্শিতার প্রমাণ দেয়।
ভারত ‘এ’ সফরের পুনরুজ্জীবন
গম্ভীরের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ভারত ‘এ’ সফরকে পুনরুজ্জীবন করার পরিকল্পনা। রাহুল দ্রাবিড় এনসিএ-র দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে ভারত ‘এ’ দলের সফর সীমিত হয়ে পড়েছে। যে কয়েকটি সফর হয়েছে, সেগুলি ছিল বড় সিরিজের জন্য শ্যাডো ট্যুর। গম্ভীর মনে করেন, ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তারকাদের তৈরি করতে এই সফরগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভারত ‘এ’ সফরকে পুনরুজ্জীবন করা। দ্রাবিড়ের সময়ে যেমন নিয়মিত শ্যাডো ট্যুর হতো, গম্ভীরও তেমনটাই চান। তিনি নিজে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চান।”
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হবে ২০ জুন। এর আগে ভারত ‘এ’ দল ইংল্যান্ডে তিনটি চার দিনের ম্যাচ খেলবে। এই সফরে গম্ভীরের উপস্থিতি রিজার্ভ খেলোয়াড়দের মূল্যায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। ভারতীয় টেস্ট দলে বর্তমানে কিছু জায়গা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। রোহিত শর্মার ফর্ম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুভমান গিল এবং বিরাট কোহলিও লাল বলের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করা গম্ভীরের জন্য অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে।
টেস্ট ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জ
গম্ভীরের কোচিংয়ের অধীনে ভারত সাদা বলের ক্রিকেটে দারুণ সাফল্য পেয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় তার প্রমাণ। তবে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর রেকর্ড এখনও প্রশ্নের মুখে। নিউজিল্যান্ডের কাছে ০-৩ হার এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১-৩ ব্যবধানে পরাজয় তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ইংল্যান্ড সফরে ভারতের শেষ জয় এসেছিল ২০০৭ সালে, রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে। তারপর থেকে ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারত কোনও সিরিজ জিততে পারেনি। ২০২১ সালে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারত ২-১ এগিয়ে থাকলেও শেষ টেস্ট কোভিড-১৯-এর কারণে পরিত্যক্ত হয়।
ইংল্যান্ডের আর্দ্র পিচ এবং সুইং বোলিং টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের জন্য সবসময় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গম্ভীর এই সফরে সাফল্য পেতে চান এবং তার জন্য তিনি ভারত ‘এ’ দলের মাধ্যমে প্রস্তুতি শুরু করতে চান। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করতে চান, যাতে মূল দলের জন্য সঠিক সংমিশ্রণ তৈরি করা যায়।
গম্ভীরের দর্শন
গম্ভীর সবসময় ‘দল প্রথম’ দর্শনে বিশ্বাসী। তিনি সুপারস্টার সংস্কৃতি পছন্দ করেন না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁর সাহসী সিদ্ধান্ত, যেমন নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া, ফল দিয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটেও তিনি একই পথে হাঁটতে চান। ভারত ‘এ’ সফরে তিনি তরুণ প্রতিভাদের মধ্যে থেকে ভবিষ্যতের তারকা খুঁজে বের করতে চান।
বিসিসিআই-এর সূত্র জানিয়েছে, গম্ভীরের এই উদ্যোগ টেস্ট দলের রিজার্ভ শক্তি বাড়ানোর জন্য। অভিষেক শর্মা, নীতিশ রেড্ডি, সাই সুদর্শনের মতো তরুণরা ইতিমধ্যে সাদা বলে নজর কেড়েছেন। এখন টেস্ট ক্রিকেটের জন্যও এমন প্রতিভা তৈরি করতে চান গম্ভীর।
ইংল্যান্ডে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ গম্ভীরের কোচিং কেরিয়ারের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হবে। ভারত ‘এ’ দলের সঙ্গে তাঁর সফর এই প্রস্তুতির প্রথম পদক্ষেপ। তিনি যদি এই সফরে সফল হন, তবে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারেন। গম্ভীরের এই সাহসী সিদ্ধান্ত ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন দিশা দেখাতে পারে। ভক্তরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, দেখার জন্য গম্ভীর কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন।