পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী ২১ মার্চ লন্ডন সফরে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে তাঁর লন্ডন সফরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং এই সফরটি হবে সাত দিনের। জানা গেছে, মমতার সফরের পথ শুরু হবে দুবাই হয়ে, তারপর লন্ডন পৌঁছাবেন তিনি। এই সফরে তাঁর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ, শিল্পবৈঠক, এবং পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন এবং সামাজিক প্রকল্পগুলোর প্রচার।
মমতার লন্ডন সফরের প্রথম কার্যক্রম হবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে তিনি ছাত্রছাত্রী এবং গবেষকদের সামনে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দিক তুলে ধরবেন। সংস্কৃতি, ইতিহাস, পর্যটন, এবং সামাজিক প্রকল্প যেমন ‘‘কন্যাশ্রী’’ সহ পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নমূলক উদ্যোগগুলো নিয়ে তিনি কথা বলবেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা মমতার জন্য একটি বড় সম্মান এবং তার আন্তর্জাতিক মঞ্চে উপস্থিতির গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে।
এর পাশাপাশি, মমতা একটি শিল্পবৈঠকে অংশ নেবেন, যেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের জন্য অনুকূল পরিবেশ এবং রাজ্য সরকারের শিল্পনীতি নিয়ে আলোচনা করবেন। শিল্পপতি ও বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি পশ্চিমবঙ্গে আরও বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চান। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে রাজ্যের ব্যবসাবান্ধব নীতিগুলোর সুবিধা তুলে ধরার মাধ্যমে তিনি রাজ্যের উন্নয়ন ও শিল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তাদের আগ্রহী করার চেষ্টা করবেন।
রাজ্যের শিল্পখাতের উন্নতির লক্ষ্যে মমতার লন্ডন সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলায় বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা শিল্পমহলে বেশ সফলতা লাভ করেছে। এই সম্মেলনের সাফল্য লন্ডনে শিল্পবৈঠকের মাধ্যমে আরও এগিয়ে নিতে চান মমতা। এর আগে তিনি স্পেন এবং দুবাই সফর করেছিলেন, যেখানে তিনি শিল্পবৈঠক করেছেন এবং পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এছাড়া, মমতার লন্ডন সফরের একটি বিশেষ দিক হবে পশ্চিমবঙ্গ এবং ব্রিটেনের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করা। অতীতে কলকাতা এবং লন্ডনের মধ্যে বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, এবং মমতার এই সফর সেই সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে পারে। কলকাতার ইতিহাসে ব্রিটেনের ভূমিকা এবং সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন নতুন করে পুনর্সংস্কৃত হতে পারে।
লন্ডন সফরের মাধ্যমে মমতা পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক স্তরে আরও উন্নত করতে এবং রাজ্যের অর্থনীতি এবং শিল্প খাতকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান। তাঁর এই বিদেশ সফর শুধুমাত্র রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রচারের সুযোগ তৈরি করবে না, বরং পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও শক্তিশালী করবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন সফর আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।