বিধানসভা নির্বাচনের পর এবার হরিয়ানার স্থানীয় নির্বাচনে বিজেপির জয়ের সুনাম আরও জোরদার হয়েছে। ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস পর, ১০টি শহরের পুরনিগমের নির্বাচনে বিজেপির জয় নিশ্চিত হয়েছে। গত বুধবার নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ১০টি মেয়র আসনের মধ্যে ৯টি দখল করেছে বিজেপি। কংগ্রেস, যার ইতিহাস হরিয়ানা রাজ্যে বেশ শক্তিশালী, এবার একেবারেই পেছনে পড়ে গেছে। আশ্চর্যের বিষয় হল যে, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা ভুপেন্দ্র সিং হুডা নিজের গড় রোহতকেও হারিয়েছেন। এর ফলে কংগ্রেসের ওপর একটি বড় ধাক্কা এসেছে, যেহেতু হুডা এবং তাঁর পরিবার দীর্ঘকাল ধরে এই এলাকা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল।
এ বছর ২ মার্চ হরিয়ানা রাজ্যের ১০টি শহরের মেয়র নির্বাচন হয়, যেখানে ফরিদাবাদ, হিসার, রোহতক, কার্নাল, যমুনানগর, গুরুগ্রাম, মানেসর, আম্বালা, সোনিপথ, এবং পানিপথে ভোট গ্রহণ করা হয়। এই নির্বাচনে বিজেপির জয় নিশ্চিত হয়ে যায়, এমনকি বেশিরভাগ আসনে তারা একপেশে জয় লাভ করে। একমাত্র মানেসর ছাড়া, বাকী সমস্ত পুরনিগমের মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন বিজেপির প্রার্থীরা।
কংগ্রেসের জন্য এই নির্বাচনের ফলাফল ছিল একটি বড় ধাক্কা। বিশেষ করে, কংগ্রেসের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা ভুপেন্দ্র সিং হুডা রোহতক থেকে দলের প্রার্থীদের জেতাতে পারেননি। রোহতক কংগ্রেসের একটি ঐতিহ্যবাহী ‘গড়’ হিসেবে পরিচিত, এবং এই আসনে হুডার নেতৃত্বাধীন দলটি বহু বছর ধরে দাপট দেখিয়ে আসছিল। তবে এবার বিজেপির প্রার্থী সেখানে জয়ী হয়েছেন, যা কংগ্রেসের জন্য একটি বড় বিপর্যয়।
এছাড়া, বিজেপি যে শুধু প্রাচীন গড়গুলিতেই নয়, বরং নতুন এবং শহরাঞ্চলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছে, তা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ফরিদাবাদ, হিসার, কার্নাল, যমুনানগর, গুরুগ্রাম, এবং অন্যান্য শহরে বিজেপি এক পেশে জয় পেয়েছে। ফলস্বরূপ, কংগ্রেসের জন্য এই ফলাফল হঠাৎ একটি রাজনৈতিক বিপর্যয় হয়ে উঠেছে।
পশ্চিম হরিয়ানায় বিশেষ করে কৃষক আন্দোলনের পর, কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেকেই মনে করছেন, বিজেপির এই জয় হরিয়ানা রাজ্যে তার বিরোধী শক্তির তুলনায় আরও শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিজেপির জয় জয়কার হরিয়ানার রাজনীতি তথা নির্বাচনী পরিস্থিতির দিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বিজেপি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, তেমনি কংগ্রেসের গোপন দুর্বলতা এবং জনসংযোগের অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এই ফলাফল কেবল কংগ্রেসের জন্যই নয়, বিজেপির জন্যও অনেক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি তার রাজনৈতিক কৌশল এবং জনসংযোগকে নতুনভাবে তৈরি করেছে, যা তাদের এই বিপুল বিজয়ে দৃশ্যমান। হরিয়ানার মতো রাজ্যে যেখানে বিজেপি বিরোধী শক্তির উপস্থিতি অনেক সময় শক্তিশালী ছিল, সেখানে এরকম একপেশে বিজয় তাদের আঞ্চলিক শক্তির এক নতুন মাত্রা প্রমাণ করে।
তবে, একথাও বলা চলে যে কংগ্রেসের জন্য এটি শুধুমাত্র একটি একক পরাজয় নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত। দলটি কীভাবে নিজেদের সংগঠন এবং নেতৃত্বকে শক্তিশালী করবে, তা আগামী দিনের রাজনীতিতে প্রধান প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে।