রাজনীতির মাটিতে কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বিজেপির বাহুবলী নেতা অর্জুন সিংয়ের জন্য তৈরি করেছেন এক নতুন ‘ব্যুহ’। তবে, এখানে অর্জুন সিংয়ের জন্য হুমকি বা চ্যালেঞ্জ রয়েছে—মদন মিত্র স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘‘অর্জুন যদি কামারহাটিতে ঢুকতে চান, ঢুকতে পারবেন, কিন্তু বের হতে পারবেন না।’’
এই মন্তব্যের মাধ্যমে মদন মিত্র কেবল একটি রাজনৈতিক আক্রমণই করেছেন, বরং তিনি কামারহাটির রাজনীতি এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন এক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন। বারাকপুরের বিজেপি নেতা অর্জুন সিংকে এই চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে মদন মিত্র তাঁর এলাকা কামারহাটিতে অবাঞ্ছিত হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বক্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশে আরও উত্তেজনা বাড়িয়েছে, বিশেষত তৃণমূল-বিজেপি দ্বন্দ্বে।
রাজ্যে একাধিক অশান্তির ঘটনা ঘটেছে গত কয়েকদিনে, যার মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মধ্যে অশান্তি, বেলঘরিয়ায় শুটআউট, এবং রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে বিভিন্ন এলাকায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এসবের মধ্যে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অশান্তির ঘটনায় বাম এবং বিজেপি তৃণমূলকে দায়ী করেছে, আবার শাসক দল বাম এবং সিপিএমের আঁতাঁতকে অভিযোগের নিশানা করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, বিজেপির নেতা অর্জুন সিং তৃণমূল এবং সিপিএমের মধ্যে ‘গট আপ’ তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন, যা শাসক দলের নেতাদের কাছে খুবই অপ্রিয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে, মদন মিত্র অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কামারহাটির জনতা খুব সচেতন, তারা জানে কে এখানে শান্তি চাইছে এবং কে অশান্তি। অর্জুন যদি এখানকার পরিস্থিতি বদলাতে আসে, তবে সে আর বের হতে পারবে না।’’
মদন মিত্রের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল অর্জুন সিংয়ের রাজনৈতিক অবস্থান এবং তার বিরোধী দলের মধ্যে স্থান। মদন সরাসরি বললেন, ‘‘কী অর্জুন? বিজেপি তো তাকে বসার জায়গা দেয় না। আগে নিজের জায়গা ঠিক করুক, তারপর অন্য জায়গার কথা ভাবুক।’’ এখানে মদন মিত্রের বক্তব্য ছিল, অর্জুন সিংয়ের রাজনৈতিক শক্তি এবং মর্যাদা কোথায়, তা পরিষ্কার করার প্রয়োজন রয়েছে। এর পাশাপাশি, মদন আরও যোগ করেন, ‘‘যারা মজদুর ভবনে যান, আমরা তাদের ওপর নজর রাখছি।’’ তিনি একে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
মদন মিত্রের এই চ্যালেঞ্জের প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত অর্জুন সিংয়ের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। তবে, এটি স্পষ্ট যে রাজনীতির এই ধরনের আক্রমণ পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জটিল করবে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে চলতে থাকা ক্ষমতা সংগ্রাম আরও তীব্র হবে।
রাজ্য রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশেষত উত্তর ২৪ পরগনা এবং কামারহাটি এলাকা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, যেখানে বিজেপি কিছু সময় ধরে তার অবস্থান শক্ত করতে চায়। মদন মিত্রের এই বক্তব্য কি আসলেই অর্জুন সিংয়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে, তা সময়ই বলবে। রাজনীতির মাঠে এমন চ্যালেঞ্জ অনেক সময় অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতির গতিপথ পালটে দিতে পারে।
তবে, কামারহাটিতে মদন মিত্রের এই বক্তব্য রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং চ্যালেঞ্জের একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়ে উঠবে, এবং আগামী দিনগুলিতে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন ঘটনা এবং মোড় আসতে পারে। একদিকে যেমন তৃণমূল দল তার এলাকা কামারহাটির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে, তেমনি বিজেপি বারাকপুরের মতো অঞ্চলে তার শক্তি বৃদ্ধি করতে চায়। এই প্রতিযোগিতা এবং দ্বন্দ্বই আগামীদিনে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে।