দক্ষিণ ভারতীয় রাজনীতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তিন ভাষার নীতির প্রস্তাব। ভারতের জাতীয় শিক্ষা নীতি -এর আওতায় তিনটি ভাষার নীতি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি দক্ষিণ ভারতের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে এটি তীব্র বিরোধিতা সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে ডিএমকে (ড্রাভিডীয়ান প্রোগ্রেসিভ ফেডারেশন) পার্টি।
এ পরিস্থিতিতে, সংসদের চলমান অধিবেশনে তিন ভাষার নীতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য ডিএমকে একটি আর্জি জানিয়েছে এবং এ সংক্রান্ত একটি আবেদন জমা দিয়েছে। সোমবার, ডিএমকে-এর সদস্যরা সংসদ ভবনের বাইরে প্রতিবাদ সভা করেছেন, যার মধ্যে দলের সাংসদ কানিমোজি করুণানিধি সংসদে শাসক দলকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানোর জন্য একটি বিশেষ নোটিশ জমা দিয়েছেন। নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান তামিলনাড়ুর শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সংসদে যে মন্তব্য করেছেন, তা বিধানসভার মর্যাদা ভঙ্গের শামিল। প্রধানের ওই মন্তব্যে তিনি তামিলনাড়ুর সাংসদদের “অসভ্য” হিসেবে অভিহিত করেন, যা রাজ্যের জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
এই বিতর্কের মধ্যে, ডিএমকে সংসদে একটি আদর্শ আন্দোলন করতে চাচ্ছে, যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি সংশোধনের দাবি তুলে ধরা হয়। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ধরনের মন্তব্য তামিলনাড়ুর জনগণের সংস্কৃতি এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে অসম্মান করার চেষ্টা। দলের নেতৃবৃন্দ এমনকি বলেছেন, এই নীতি যদি কার্যকর হয়, তা তামিল ভাষার উপরে এক ধরনের আক্রমণ, যা দক্ষিণ ভারতের সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এদিকে, সংসদের অধিবেশন চলাকালীন, সরকারের পক্ষ থেকে নতুন একটি বিল উত্থাপন করার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারতের ইমিগ্রেশন এবং বিদেশী সম্পর্কিত আইনসমূহের আধুনিকীকরণ এবং একীভূতকরণ ঘটাবে। ‘ইমিগ্রেশন এবং ফরেনার্স বিল ২০২৫’ নামে পরিচিত এই বিলটি ভারতে বিদেশী প্রবেশ এবং অবস্থান সম্পর্কিত বিভিন্ন নীতির জন্য একটি নতুন কাঠামো প্রদান করবে।
বিলটি কেন্দ্রীয় সরকারকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করবে, যার মাধ্যমে দেশের বাইরে থেকে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের জন্য পাসপোর্ট বা অন্যান্য ট্রাভেল ডকুমেন্টের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা যাবে। এছাড়াও, বিদেশীদের জন্য ভিসা এবং নিবন্ধন সম্পর্কিত বিষয়গুলির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে এই আইন। নতুন আইনের লক্ষ্য হবে ভারতীয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে আরো সুশৃঙ্খল এবং আধুনিক করে তোলা, যাতে বিদেশী নাগরিকরা দ্রুত এবং সহজে ভারতে প্রবেশ এবং অবস্থান করতে পারেন, পাশাপাশি সঠিক নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। এই বিলটি সংসদে উত্থাপিত হলে, তা এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে ভারতীয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায়। তবে, এটি কতটা কার্যকর হবে এবং কীভাবে দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, তা সময়ই বলে দেবে। ভারতের চলমান রাজনৈতিক পরিবেশ এবং নতুন বিলের আলোচনায় দেশজুড়ে আরো বিতর্ক এবং আলোচনা সৃষ্টি হতে পারে, যা ভারতীয় রাজনীতির বিভিন্ন দিক উন্মোচিত করবে।