বসিরহাট আদালতে বিচারককে হেনস্থার ঘটনা কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) এক নতুন মোড় নিয়েছে। গত জানুয়ারিতে বসিরহাট আদালতের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জজ আদালত অবমাননার অভিযোগ তোলেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এক গুরুত্বপূর্ণ রুল জারি করেছে। এই রুলে ২১ জন আইনজীবী-সহ একজন সরকারি আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে।
হেনস্থার ঘটনা নিয়ে এজলাসে একটি ভিডিও রেকর্ডিং দেখানো হয়। এই ভিডিওতে আইনজীবীদের অনিয়ম এবং অশোভন আচরণ স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। এই ভিডিও রেকর্ডিং দেখার পর কলকাতা হাইকোর্ট, যে আদালতে বসিরহাটের বিচারককে হেনস্থা করা হয়েছিল, সেখানে আদালত অবমাননার বিষয়ে একনিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিচারপতি বসাক এবং রশিদির বেঞ্চ জানিয়েছে, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কীভাবে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তা বিষয়ে পরবর্তী শুনানির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বসিরহাট আদালতের ওই অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জজ, যিনি অভিযোগ তুলেছিলেন, গত জানুয়ারিতে বিষয়টি জেলা বিচারককে লিখিতভাবে জানান। এরপর জেলা বিচারক সেই অভিযোগ কলকাতা হাইকোর্টে পাঠান। এই সমস্ত প্রেক্ষাপটে কলকাতা হাইকোর্টে মামলার শুনানি হয় এবং আদালত অবমাননার রুল জারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ ছিল, আদালতের সুষ্ঠু কার্যক্রমে বাধা দিয়ে আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেছেন। এমনকি, কিছু আইনজীবী অশোভন আচরণও করেন, যা বিচার ব্যবস্থার প্রতি অবমাননা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর হিসেবে বিবেচনা করে, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা মামলা রুজু করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এটি একটি বিরল ঘটনা, যেখানে আদালত নিজেই শাস্তি দিতে একেবারে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এসেছে। কলকাতা হাইকোর্টের এই পদক্ষেপের ফলে আইনজীবীদের মধ্যে একটি বার্তা চলে যাবে যে, বিচারক বা আদালতের প্রতি অসম্মান বা হেনস্থার মতো ঘটনা সহ্য করা হবে না। আদালতের শৃঙ্খলা রক্ষা করা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই ধরনের ঘটনার মোকাবিলা করতে আদালত কঠোর হতে পারে।
এদিকে, এই রুল জারি হওয়ার পর আইনজীবী মহলে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বহু আইনজীবী মনে করছেন, আদালত অবমাননার ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হাইকোর্টের পক্ষ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি ভবিষ্যতে আদালতের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। তবে, এই ঘটনা একেবারে নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে আদালত অবমাননা, বিচারকের প্রতি অসম্মান, আদালতের কাজের প্রতি হস্তক্ষেপের মতো অভিযোগ ওঠে।
এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে যে, কলকাতা হাইকোর্টে পরবর্তী শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করা হবে। সেই সময় আদালত ঠিক করবে, অভিযুক্ত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত আইনি মহলে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
বসিরহাটের ঘটনা আদালত ব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাস আরও দৃঢ় করতে সহায়ক হতে পারে, তবে এর প্রভাব কতটা গভীর হবে, তা ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। অনেকেই মনে করছেন, যদি এই পদক্ষেপ যথাযথভাবে কার্যকর হয়, তবে আদালত অবমাননার মতো ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।