মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারকদের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শুল্ক আরোপের ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এবং ভারতীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, যা অন্যান্য দেশের পণ্যের তুলনায় কম প্রতিযোগিতামূলক হয়ে পড়বে। ফলে, ভারতীয় ফার্মা সেক্টরের জন্য এই পরিবর্তন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতকে ‘খুব উচ্চ শুল্ক আরোপকারী দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আগামী ২ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের উপর নতুন শুল্ক আরোপ কার্যকর হবে। এর মধ্যে ভারতও অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা ভারতীয় ফার্মা খাতের উপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে, ভারত আমেরিকান ওষুধের উপর ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করে, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় ওষুধের উপর কোনো শুল্ক আরোপ করে না। শারদুল আমরচন্দ মঙ্গলদাস অ্যান্ড কো’র পার্টনার অরবিন্দ শর্মা জানান, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের প্রধান আমদানিকারক ছিল, যার মাধ্যমে দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূর্ণ হচ্ছিল। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে আমদানি করা ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের উপর বড় শুল্ক আরোপ করে, তবে তার প্রভাব ভারতীয় ফার্মা খাতে অত্যন্ত লক্ষণীয় হবে এবং এর নিজস্ব অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে বড় প্রভাব ফেলবে।”
বর্তমানে ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলি মার্কিন বাজারে উল্লেখযোগ্য অংশীদার। ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চারটি প্রেসক্রিপশনের মধ্যে একটি ভারতীয় কোম্পানি দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল। এই সেক্টর ২০২২ সালে ২১৯ বিলিয়ন ডলার সঞ্চয় করেছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক আরোপের ফলে ভারতের ছোট ফার্মা কোম্পানিগুলোর উপর চাপ বেড়ে যাবে। এই কোম্পানিগুলি সাধারণত কম মার্জিনে কাজ করে এবং তাদের জন্য শুল্ক বৃদ্ধি বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তারা আরও জানাচ্ছেন, এই কোম্পানিগুলি হয় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে অথবা একত্রিত হতে বাধ্য হবে।
ফার্মা বিশেষজ্ঞ বৈভব শর্মা বলেন, “শুল্ক বাড়ানোর ফলে ভারতীয় কোম্পানির উৎপাদন খরচ বাড়বে, যা আমেরিকায় বিক্রি হওয়া ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেবে। এতে করে তাদের প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য অন্য দেশগুলির পণ্যকে সুবিধা দেবে, যা ভারতীয় পণ্যের প্রতি চাহিদা কমাবে।”
বর্তমানে ভারতীয় ফার্মা সেক্টর মার্কিন বাজারে অনেক বেশি নির্ভরশীল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামীদিনে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলোর জন্য বিভিন্ন উপায় বের করা জরুরি। যদি এই শুল্ক বৃদ্ধি কার্যকর হয়, তবে ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং রফতানি নীতিগুলি পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় ফার্মা সেক্টরে বড় ধরনের শুল্ক বৃদ্ধি করে, তবে তা ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল উৎপাদন খাতে এক ধরণের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি, ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য এটি আরও কঠিন হবে, কারণ তারা তাদের উৎপাদন খরচ হ্রাস করতে পারবে না এবং এই শুল্কের প্রভাব তারাও অনুভব করবে।
এছাড়া, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় ওষুধের উপর শুল্ক বাড়ায়, তবে ভারতের ফার্মা কোম্পানির জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। ভারতীয় কোম্পানিগুলি বর্তমানে মার্কিন বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করতে সফল হলেও, শুল্ক বৃদ্ধি তাদের জন্য আর্থিকভাবে ক্ষতিকারক হতে পারে।
ভারতীয় ফার্মা খাতের জন্য মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনা একটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। যদি শুল্ক বৃদ্ধি বাস্তবায়িত হয়, তবে তা ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলোর জন্য বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবিলায় ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলি তাদের উৎপাদন নীতি এবং রফতানি কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে পারে, যাতে তারা মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে পারে।