IAF combat training: ‘মেঘের কোলে’ উমিয়াম লেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধ মহড়া

শনিবার মেঘালয়ের শিলংয়ে অবস্থিত উমিয়াম লেকে ভারতীয় বিমান বাহিনী (IAF ) একটি যুদ্ধ প্রশিক্ষণ অনুশীলন পরিচালনা করেছে। এই অনুশীলনে বিভিন্ন বিমান, হেলিকপ্টার, প্যারা জাম্পার এবং…

IAF Conducts Combat Training at Umiam Lake, Showcasing Aerial & Special Ops

short-samachar

শনিবার মেঘালয়ের শিলংয়ে অবস্থিত উমিয়াম লেকে ভারতীয় বিমান বাহিনী (IAF ) একটি যুদ্ধ প্রশিক্ষণ অনুশীলন পরিচালনা করেছে। এই অনুশীলনে বিভিন্ন বিমান, হেলিকপ্টার, প্যারা জাম্পার এবং বিশেষ অপারেশনের দক্ষতা প্রদর্শন করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী এবং নৌবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর লক্ষ্যে এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।

   

প্রশিক্ষণে কমব্যাট রাবারাইজড রেইডিং ক্র্যাফট ড্রপ, প্যারা জাম্প এবং হেলোকাস্টিং (বিমান থেকে জলে লাফ দেওয়া) অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই অপারেশনগুলোতে এএন-৩২ এবং সি-১৩০ বিমান ব্যবহার করা হয়েছে। শিলংয়ে উপস্থিত ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (এনসিসি) ক্যাডেটরা এই অপারেশনগুলো সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর দক্ষতার প্রশংসা করেছেন।

এই প্রশিক্ষণের বিশদ বিবরণ এক্স (X) প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করে আইএএফ লিখেছে, “শিলংয়ের উমিয়াম লেকে আইএএফ যুদ্ধ অপারেশন প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছে। এতে কমব্যাট রাবারাইজড রেইডিং ক্র্যাফট ড্রপ, প্যারা জাম্প এবং এএন-৩২, সি-১৩০ বিমান এবং এমআই-১৭ হেলিকপ্টার থেকে হেলোকাস্টিং প্রদর্শিত হয়েছে।” তাদের পোস্টে আরও বলা হয়েছে, “এই মিশনগুলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়েছে এবং শিলংয়ের এনসিসি ক্যাডেটরা এটি প্রত্যক্ষ করে মুগ্ধ হয়েছেন।”

প্রশিক্ষণের বিশেষত্ব
এই প্রশিক্ষণে ভারতীয় বিমান বাহিনী তাদের আকাশ ও জলের উপর দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। কমব্যাট রাবারাইজড রেইডিং ক্র্যাফট ড্রপ হলো এমন একটি কৌশল, যেখানে বিশেষভাবে তৈরি রাবারের নৌকা বিমান থেকে জলে ফেলা হয়। এটি দ্রুত এবং গোপনীয় অপারেশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যারা জাম্প এবং হেলোকাস্টিংয়ের মাধ্যমে বিমান বাহিনী তাদের সৈন্যদের যেকোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত মোতায়েন করার ক্ষমতা দেখিয়েছে। এএন-৩২ এবং সি-১৩০ বিমানগুলো তাদের পরিবহন ক্ষমতা এবং নির্ভরযোগ্যতার জন্য বিখ্যাত, যখন এমআই-১৭ হেলিকপ্টারগুলো বিশেষ অপারেশনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।

এই প্রশিক্ষণ শুধুমাত্র বিমান বাহিনীর দক্ষতাই প্রকাশ করেনি, বরং ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ বাহিনী এবং নৌবাহিনীর সঙ্গে তাদের সমন্বয়ের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এটি ভারতের সশস্ত্র বাহিনীগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতার একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে।

এনসিসি ক্যাডেটদের অভিজ্ঞতা
শিলংয়ে উপস্থিত এনসিসি ক্যাডেটদের জন্য এই প্রশিক্ষণ ছিল একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। তারা ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাহসিকতা ও পেশাদারিত্ব প্রত্যক্ষ করেছেন। এই ধরনের অনুষ্ঠান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম এবং সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের প্রেরণা জাগায়। ক্যাডেটরা বিমান থেকে প্যারা জাম্পারদের লাফ দেওয়া এবং জলে নৌকা নামানোর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।

নতুন যুদ্ধ বিমানের প্রয়োজনীয়তা
এই প্রশিক্ষণের পটভূমিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশিত হয়েছে। গত ৫ মার্চ সূত্র থেকে জানা গেছে যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আইএএফ-এর নতুন মাল্টিরোল ফাইটার এয়ারক্রাফট প্রাপ্তির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে। এই বিমানগুলো বিমান বাহিনীর যুদ্ধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া ‘আইএএফ-এর ক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, কমিটির বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে ভারতীয় বিমান বাহিনী তাদের ক্ষমতা অর্জনের জন্য একটি বিবৃতি প্রস্তুত করবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন স্তরে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার জন্য কাজ করবে। কমিটি সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের একক ইঞ্জিনের এফ-৩৫ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছে, অন্যদিকে রাশিয়া তাদের সু-৫৭ পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ বিমানের প্রস্তাব দিচ্ছে।

কমিটি স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য মূল ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে এবং আইএএফ-এর কাঙ্ক্ষিত ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুপারিশ করেছে। এই পদক্ষেপ ভারতীয় বিমান বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে আরও শক্তিশালী করবে।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর ক্ষমতা
ভারতীয় বিমান বাহিনী বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বিমান বাহিনী হিসেবে গণ্য হয়। এএন-৩২, সি-১৩০ এবং এমআই-১৭ হেলিকপ্টারের মতো বিমান ও হেলিকপ্টার তাদের বহুমুখী ক্ষমতার প্রমাণ। উমিয়াম লেকে এই প্রশিক্ষণ প্রমাণ করে যে, আইএএফ কঠিন পরিবেশেও অপারেশন পরিচালনা করতে সক্ষম। এই ধরনের প্রশিক্ষণ তাদের প্রস্তুতি এবং পেশাদারিত্বের মান বাড়ায়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নতুন মাল্টিরোল ফাইটার এয়ারক্রাফট অর্জনের পরিকল্পনা ভারতীয় বিমান বাহিনীর আধুনিকীকরণের একটি বড় পদক্ষেপ। এফ-৩৫ এবং সু-৫৭-এর মতো পঞ্চম প্রজন্মের বিমান বিমান বাহিনীকে আরও উন্নত প্রযুক্তি ও যুদ্ধ ক্ষমতা প্রদান করবে। এটি ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলকে শক্তিশালী করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

উমিয়াম লেকে আইএএফ-এর এই প্রশিক্ষণ ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা ও প্রস্তুতির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি শুধুমাত্র বিমান বাহিনীর ক্ষমতাই প্রকাশ করেনি, বরং সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সঙ্গে তাদের সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। এনসিসি ক্যাডেটদের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। নতুন যুদ্ধ বিমান অর্জনের পরিকল্পনা ভারতীয় বিমান বাহিনীকে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করবে। এই ধরনের উদ্যোগ ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করে তুলছে।