মেদিনীপুরে বাম ছাত্রীরা পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছে, যার মধ্যে গরম মোম ঢালার দাবি ওঠে। তবে একই ঘটনায় পৃথক অভিযোগের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, যেটি নিয়ে চলছে তীব্র বিতর্ক। এই ঘটনার পটভূমি হলো, যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে ধর্মঘটে নেমে বাম ছাত্রীরা পুলিশের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগের ভিত্তিতে ডিএসও (ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন) এবং এসএফআই (স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া) ছাত্রীরা কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছে, যার শুনানি আগামী সোমবারে হতে পারে।
বুধবার এই মামলার প্রেক্ষিতে মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান কার দাবি করেছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “বামপন্থী দলের জেলা নেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনা ইস্যু করতে চেষ্টা করছেন।” পুলিশের দাবি, ছাত্রীরা যে অভিযোগ করছেন, তা সত্য নয়। তবে এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে গরম মোম নিয়ে।
ডিএসও-র ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের গায়ে গলানো মোম ঢেলে দেওয়া হয়েছিল, যা অত্যন্ত ভয়াবহ ও অমানবিক। কিন্তু এসএফআইয়ের এক ছাত্রীর দাখিল করা পিটিশনে এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পুলিশ তাদেরকে মোম আনতে বলেছিল এবং ভয় দেখানো হয়েছিল। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, সত্যি কি পুলিশ গায়ে গরম মোম ঢেলেছিল, না কি মোম আনতে বলার কথা ছিল? এই বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এক্স হ্যান্ডলে পিটিশনের কপির একটি অংশ পোস্ট করে, “কোনটা সত্যি? ছাত্রীর অভিযোগ কি পুলিশ গায়ে গরম মোম ঢেলে দিয়েছিল, না কি মোম আনতে বলা হয়েছিল?”
এছাড়া, পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার আরও বলেন, তিনি জানেন না যে ভাইরাল ভিডিওর বিষয় কী, তবে একটি ভাইরাল অডিও তাঁদের কাছে রয়েছে। ওই অডিওতে সিপিএম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক বিজয় পালের কথা শোনা যাচ্ছে, যেখানে তিনি দাবি করছেন, পুলিশকে চেপে ধরার জন্য একটি ইস্যু তৈরি করা হবে। তবে বিজয় পালের দাবি, তিনি এমন কিছু বলেননি।
পিটিশনের বয়ান নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং এ নিয়ে ডিএসও-র রাজ্য সভাপতি মণিশংকর পট্টনায়েক বলেন, “যে পিটিশন কোর্টে জমা পড়েছে, তা ডিএসও-র ছাত্রীর নয়। এটি সম্ভবত অন্য কোনও বাম দলের ছাত্রীর। ডিএসও-র ছাত্রীরা যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ সত্য।”
এই ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে সত্য ও মিথ্যা খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ছে। পুলিশের অভিযোগ এবং বাম ছাত্রীদের অভিযোগের মধ্যে কেমন সম্পর্ক রয়েছে, তা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। তবে বিষয়টি আদালতে যাবে এবং বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে তার শুনানি হবে, যেখানে আদালত এই বিষয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এই বিতর্কের মধ্যে যেটি পরিষ্কার, তা হলো যে ঘটনা ঘটেছে তার ব্যাখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। যদি এটি সত্যি হয়, তাহলে এটি পুলিশের নির্যাতনের ভয়াবহ উদাহরণ হতে পারে, কিন্তু যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে এটি একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত হতে পারে। তাই আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এই ঘটনা নিয়ে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে।