বক্সীর বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মমতার পক্ষ থেকে দেয়া ‘স্থগিতাদেশ’ রাজনৈতিক মহলে নতুন জল্পনা সৃষ্টি করেছে। গত বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে ৩৬ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ছিল ভোটার তালিকা সংস্কারের জন্য জেলা ভিত্তিক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য। সেই বৈঠকে, বক্সী এই প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিলেন এবং জেলা স্তরে বিভিন্ন কমিটি গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু, রাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই প্রক্রিয়াকে স্থগিত ঘোষণা করে দেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তে সবার প্রশ্ন, কেন এমন হঠাৎ সিদ্ধান্ত? সূত্রের খবর অনুযায়ী, মমতা নিজেই এখন কমিটি গঠন করবেন, এবং জেলা স্তরে কোনও কমিটি গঠন করা হবে না আপাতত। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও মমতার সিদ্ধান্তের স্পষ্ট কারণ এখনও জানানো হয়নি, তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন যে এটি তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় এবং নেতৃত্বের মধ্যে সমঝোতার বিষয় হতে পারে।
বক্সীর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সব জেলার তৃণমূল সভাপতিরা। এছাড়া, বীরভূমের কোর কমিটির সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, ব্লক সভাপতি ও শাখা সংগঠনের সভাপতিদের নিয়ে একটি করে কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া, প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় চারজন রাজ্যস্তরের নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, যেমন ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিমদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হঠাৎ স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর, এখন সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে, বক্সীও এই সিদ্ধান্তের পর পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছেন এবং তিনি জানিয়েছেন যে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য ১৫ মার্চ একটি বৈঠক হবে। সেখানে দলের জেলা নেতৃত্বও উপস্থিত থাকবে।
এদিকে, বক্সীর বৈঠকে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতি। যদিও অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, তিনি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। ১৫ মার্চের বৈঠকে তিনি কি উপস্থিত থাকবেন, এবং তার নেতৃত্বে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দিক নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। একদিকে, মমতার নেতৃত্বে জেলা স্তরে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া স্থগিত হলেও, অপরদিকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা এবং ভবিষ্যতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তৃণমূলের এই পদক্ষেপ দলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় এবং ভবিষ্যতে দলের সংগঠনের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য একটি বড় কৌশল হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো, ১৫ মার্চের বৈঠকটি কী ধরনের রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করবে? মমতার এই সিদ্ধান্তের পরে দলের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবার দৃষ্টি সেই বৈঠকের দিকে।