জালিয়াতি রুখতে রেলের বড় পদক্ষেপ, বাতিল গ্রুপ-সি নিয়োগ প্রক্রিয়া

ভারতীয় রেল (Indian Railways) সম্প্রতি তাদের গ্রুপ-সি পোস্টের জন্য সমস্ত বিভাগীয় নিয়োগ প্রক্রিয়া (Departmental Selection Process) বাতিল করেছে। রেল মন্ত্রকের তরফে ২০২৫ সালের ৪ মার্চের…

Railways Take Major Step to Combat Fraud, Cancels Group-C Recruitment Process

short-samachar

ভারতীয় রেল (Indian Railways) সম্প্রতি তাদের গ্রুপ-সি পোস্টের জন্য সমস্ত বিভাগীয় নিয়োগ প্রক্রিয়া (Departmental Selection Process) বাতিল করেছে। রেল মন্ত্রকের তরফে ২০২৫ সালের ৪ মার্চের আগে যেসব নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়নি এবং অনুমোদন পায়নি, সেগুলিই বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে কর্মচারীদের পদন্নতি এবং গ্রুপ-সি পদের জন্য বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত রাখা হল।

   

রেল মন্ত্রকের এই পদক্ষেপের পেছনে মূল কারণ হিসেবে ‘অনিয়ম’ এবং ‘দুর্নীতি’ উঠে এসেছে। সম্প্রতি ডিপার্টমেন্টাল সিলেকশন প্রক্রিয়ায় কিছু গুরুতর অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে। এই অনিয়মগুলো ঠেকাতে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে রেল মন্ত্রক এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এই বিষয় নিয়ে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে, যা ভারতীয় রেলের সব জ়োনের জেনারেল ম্যানেজারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, নতুন বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না।

রেলে কর্মরত কর্মচারীদের পদন্নোতির জন্য বিভাগীয় পরীক্ষা নেওয়ার প্রথা রয়েছে। এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে কর্মচারীরা তাদের বর্তমান পদের চেয়ে উন্নত পদে নিয়োগ হন। তবে এই বিভাগীয় পরীক্ষাগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিল। এই দুর্নীতি ধরা পড়ে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (CBI) একটি তদন্তে।

সিবিআই সম্প্রতি রেলের বিভাগীয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি বড় চক্র ফাঁস করেছে। ৩ মার্চ রাতে উত্তরপ্রদেশের ইস্ট-সেন্ট্রাল রেলের মুঘলসরাই স্টেশন থেকে ২৬ জন রেলের কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়েছে। সিবিআই অভিযানে ৮ জায়গায় হানা দেয় এবং ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা নগদ উদ্ধার করে। এছাড়াও, উদ্ধার হয়েছিল একাধিক প্রশ্নপত্র, যা রেলের কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল।

এই দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসার পরই রেল মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নেয় যে, বিভাগীয় নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাতিল করা হবে। পাশাপাশি, রেলের রিক্রুটমেন্ট বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতে সমস্ত ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা সেন্ট্রালাইজড কম্পিউটার বেসড টেস্ট (CBT)-এর মাধ্যমে নেওয়া হবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রেলের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হবে।

এটা নিশ্চিতভাবেই রেলের কর্মচারী এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি বড় পরিবর্তন। ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া ৪ মার্চের আগে চূড়ান্ত হয়নি, সেগুলো বাতিল করা হবে এবং পুনরায় নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোন নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা যাবে না।

যেহেতু রেলে চাকরি পাওয়া একটি বড় লক্ষ্য, তাই এই সিদ্ধান্ত অনেক কর্মচারীর জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে। তবে রেল মন্ত্রকের দাবি, তাদের লক্ষ্য হল সঠিক ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া তৈরি করা, যাতে ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি না হয়।

এছাড়া, সিবিআইয়ের তদন্তের পর, রেল কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে রেলের কর্মীরা হতাশ, অন্যদিকে রেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং নেতৃবৃন্দ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, এটি রেলের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তবে প্রশ্ন উঠছে, রেল মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী হলে আগামী দিনে নিয়োগ প্রক্রিয়া কীভাবে পরিচালিত হবে এবং রেলের কর্মচারীদের চাকরি পাওয়া ও পদন্নতি নিশ্চিত হবে কিনা। সরকার এই বিষয়ে কীভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।