জাতীয় পরিসংখ্যান মতে, বাংলার নদীগুলি প্রায় ৮১৫ টি শুশুকের (River Dolphins) বাসস্থান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার গির ন্যাশনাল পার্কে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন। ভারতীয় নদীতে ডলফিনের জনসংখ্যা ২০২৪ ৯River Dolphins in India 2024) শীর্ষক এই সমীক্ষা ভারতের মোট ডলফিন জনসংখ্যা ৬,৩২৭ হিসেবে নির্ধারণ করেছে, যা আটটি রাজ্য এবং তিনটি প্রধান নদী — গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও বিপাশা নদীতে ছড়িয়ে রয়েছে। এই সমীক্ষাটি ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গ দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শুশুক বা রিভার ডলফিনের বাসস্থান, যা উত্তরপ্রদেশ (২,৩৯৭) এবং বিহার (২,২২০) এর পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে। তবে, পশ্চিমবঙ্গের বিশেষত্ব হচ্ছে সেখানে দুটি প্রজাতির ডলফিন পাওয়া গেছে — গঙ্গার শুশুক বা গাঙ্গেয় নদীর ডলফিন(Platanista gangetica) যা ভারতের জাতীয় জলজ প্রাণী এবং ইরাবদি ডলফিন (Orcaella brevirostris) যা একইভাবে মিস্টি জল এবং নোনা জলে বাস করতে পারে।
এই সমীক্ষার ফল অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় ডলফিনের জনসংখ্যা ৮১৫। এর পাশাপাশি, সুন্দরবন এলাকায় ১০৮টি ইরাবদি ডলফিনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা হয়েছে। তবে, এই দ্বিতীয় পরিসংখ্যানটি ভারতের মোট ডলফিন জনসংখ্যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি কারণ এটি শুধুমাত্র শুশুকের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য করা হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে ২,৩৬৬ কিলোমিটার গঙ্গা এবং সুন্দরবন অঞ্চলের নদী পরিসর গবেষণা করা হয়। গঙ্গা নদী এবং একাধিক নদী যেমন রূপনারায়ণ, দ্বারকেশ্বর, হলদি ও চূর্ণি নদীও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। পশ্চিমবঙ্গে মোট ১২টি নদী পরিদর্শন করা হয়েছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ ছিল ফারাক্কা ব্যারেজ থেকে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত, যা ৪৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ।
এই সমীক্ষা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের ডলফিন জনসংখ্যার সর্বনিম্ন মূল্যায়ন ছিল ৬৬৫, সর্বোচ্চ ৮১৫ এবং জনসংখ্যার সীমা ছিল ৭৬৩ থেকে ৮৭০ এর মধ্যে। গঙ্গা সাগর এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ডলফিন পাওয়া গিয়েছে, যেখানে ৪২৯টি ডলফিনের উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় ডলফিনের জন্য এই সমীক্ষা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করেছে যে, পশ্চিমবঙ্গে একটি বৃহৎ সংখ্যক ডলফিনের বাসস্থান রয়েছে। রাজ্যের বন দপ্তরও এই বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে কাজ করছে। নীলাঞ্জন মালিক, পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য সংরক্ষক এবং সুন্দরবন জীববৈচিত্র্য রিজার্ভের পরিচালক বলেছেন, ‘ডলফিনের মৃত্যুর একটি বড় কারণ হচ্ছে মাছ ধরার জাল। আমরা নিয়মিত মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রচারণা চালাচ্ছি।’
ডলফিন বা শুশুক মাছ ধরার জালে আটকে পড়ে যখন তারা শ্বাস নিতে জলের উপরে ওঠে। সেই সময় জালে আটকা পড়লে তারা আর শ্বাস নিতে পারে না। অনেক সময়, মৎস্যজীবীরা জানে যখন একটি ডলফিন জালে আটকে পড়েছে কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তারা তেল বের করার জন্য ডলফিনকে মেরে ফেলেন, যা পরে মাছের জন্য প্রলুব্ধকরণ বা টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সমীক্ষাটি ৫৮টি নদী নিয়ে করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৮টি নৌকা থেকে এবং ৩০টি রোড সার্ভে মাধ্যমে পরিদর্শন করা হয়েছে। এই সমীক্ষাটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল, কারণ ডলফিন সাধারণত ১.২৬ সেকেন্ডের জন্য জলের উপর উঠে আসে এবং ১০৭ সেকেন্ডের জন্য ডুব দিয়ে থাকে। হাইড্রোফোনও ব্যবহার করে জলের নীচে দলফিন বা শুশুকের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়। এই পদ্ধতিটি ভিজ্যুয়াল পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে মোট ডলফিনের সংখ্যা নির্ধারণে সাহায্য করেছে।
‘ডলফিনের জনসংখ্যা নির্ধারণের এই পরিসংখ্যান আমাদের জন্য বড় একটা সুবিধা। এখন, আমরা জানি কোন নদী অংশে ডলফিনের স্থিতিশীল জনসংখ্যা রয়েছে। নির্মাণ কাজ এমনভাবে করা উচিত যাতে এটি ডলফিনদের ক্ষতি না করে’ বলেছেন নীলাঞ্জন মালিক।
বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে সহ-অর্থায়ন করছে। বন দপ্তর এবং কেন্দ্রীয় দুষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের(CPCB)প্রতিনিধিরা মিলে একাধিক সভা করছেন যাতে নৌযান উন্নয়ন এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সমন্বয় নিশ্চিত করা যায়।