Padmakar Shivalkar: মুম্বই ক্রিকেটের কিংবদন্তি পদ্মাকর শিবালকর ৮৪ বছরে প্রয়াত

ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্পিনারদের মধ্যে একজন, পদ্মাকর শিবালকর (Padmakar Shivalka), সোমবার ৮৪ বছর বয়সে মুম্বইতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বাঁ-হাতি এই কিংবদন্তি স্পিনার জাতীয়…

Mumbai Cricket Legend Padmakar Shivalkar Passes Away at 84, Leaves Behind a Glorious Legacy

ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্পিনারদের মধ্যে একজন, পদ্মাকর শিবালকর (Padmakar Shivalka), সোমবার ৮৪ বছর বয়সে মুম্বইতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বাঁ-হাতি এই কিংবদন্তি স্পিনার জাতীয় দলে কখনো খেলার সুযোগ না পেলেও দেশীয় ক্রিকেটে তাঁর অসাধারণ অবদান তাঁকে অমর করে রেখেছে। বোম্বে (বর্তমান মুম্বই) রঞ্জি ট্রফির আধিপত্যের পিছনে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। ১৯৬৫-৬৬ থেকে ১৯৭৬-৭৭ সালের মধ্যে বোম্বে যে দশটি রঞ্জি ট্রফি জিতেছিল, তাতে শিবালকর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া ১৯৮০-৮১ মৌসুমে দল শিরোপা পুনরুদ্ধার করার সময়ও তিনি ছিলেন দলে। আশ্চর্যজনকভাবে, ৪৭ বছর বয়সে তিনি ফিরে এসে ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে দুটি ম্যাচ খেলেন।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ও গৌরবময় ক্যারিয়ার
পদ্মাকর শিবালকর ১৯৬২ সালের এপ্রিলে ক্রিকেট ক্লাব অফ ইন্ডিয়া প্রেসিডেন্টস একাদশের হয়ে একটি আন্তর্জাতিক একাদশের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক করেন। সেই ম্যাচে বব সিম্পসন, টম গ্র্যাভনি, কলিন কাউড্রে, এভারটন উইকস, রিচি বেনো এবং সনি রামাধিনের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা খেলেছিলেন। শিবালকর সেই ম্যাচে ৫/১২৯ এবং ২/৪৪-এর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে নিজের প্রতিভার আভাস দেন। তাঁর ক্যারিয়ারে ১২৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তিনি ১৯.৬৯ গড়ে ৫৮৯টি উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে ৩৬১টি উইকেট এসেছে রঞ্জি ট্রফিতে, যা তাঁকে মুম্বইয়ের ইতিহাসে এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী করে তুলেছে।

kolkata24x7-sports-News

   

তাঁর সবচেয়ে স্মরণীয় পারফরম্যান্স ছিল ১৯৭২-৭৩ রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে। চিপকের স্পিন-সহায়ক উইকেটে তিনি ৮/১৬-এর অসাধারণ বোলিং ফিগার দিয়ে বোম্বেকে মাত্র দুই দিন ও এক বলে জয় এনে দেন। এই পারফরম্যান্স তাঁর দক্ষতা ও প্রভাবের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বিসিসিআই ও এমসিএ-র শোকবার্তা
ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই) এক্স-এ শোক প্রকাশ করে লিখেছে, “শ্রী পদ্মাকর শিবালকরের অকাল প্রয়াণে বিসিসিআই গভীরভাবে শোকাহত। তিনি ভারতের অন্যতম সেরা স্পিনার ছিলেন। দুই দশকের ক্যারিয়ারে তিনি ১২৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৯.৬৯ গড়ে ৫৮৯টি উইকেট নিয়েছেন। ক্রিকেটে তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে তাঁকে কর্নেল সিকে নায়ড়ু লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।”

মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ)ও এক্স-এ লিখেছে, “মি. পদ্মাকর শিবালকরের প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। তিনি মুম্বই ক্রিকেটের একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি। খেলার প্রতি তাঁর অমূল্য অবদান, আবেগ এবং অনুপ্রেরণাদায়ী উত্তরাধিকার সবসময় স্মরণীয় থাকবে। তাঁর পরিবার, বন্ধুবর্গ এবং সমগ্র ক্রিকেট সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা। তাঁর আত্মা শান্তিতে থাকুক।”

এমসিএ-র সভাপতি অজিঙ্ক্য নায়েক বলেন, “আজ মুম্বই ক্রিকেট একজন সত্যিকারের কিংবদন্তিকে হারিয়েছে। পদ্মাকর শিবালকর স্যারের খেলার প্রতি অবদান, বিশেষ করে একজন শ্রেষ্ঠ স্পিনার হিসেবে, চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। তাঁর নিষ্ঠা, দক্ষতা এবং মুম্বই ক্রিকেটে প্রভাব অতুলনীয়। তাঁর প্রয়াণ ক্রিকেট সম্প্রদায়ের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।”

প্রাক্তন ক্রিকেটারদের শ্রদ্ধা
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণও শিবালকরের উত্তরাধিকারের কথা স্মরণ করে এক্স-এ লিখেছেন, “কিংবদন্তি বাঁ-হাতি স্পিনার এবং ভারতের দেশীয় ক্রিকেটের নায়ক পদ্মাকর শিবালকর স্যারের প্রয়াণে গভীরভাবে দুঃখিত। তাঁর দেশীয় ক্রিকেটের কীর্তি ও জাতীয় দলে না খেলতে পারার দুর্ভাগ্যের অনেক গল্প শুনেছি। তাঁর প্রিয়জনদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। ওঁ শান্তি।”

শিবালকরের সমসাময়িক অনেক ক্রিকেটার ও বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তিনি ভারতের হয়ে খেলতে না পারলেও তাঁর প্রতিভা ও কৃতিত্ব তাঁকে অনন্য করে রেখেছে। তাঁর সময়ে বিষাণ সিং বেদীর মতো স্পিনারের উপস্থিতি তাঁর জাতীয় দলে নির্বাচিত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে তিনি কখনো হতাশ হননি এবং দেশীয় ক্রিকেটে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে গেছেন।

শিবালকরের অবদান ও উত্তরাধিকার
পদ্মাকর শিবালকর মুম্বই ক্রিকেটে ‘প্যাডি স্যার’ নামে সম্মানিত ছিলেন। ৫০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার আগে তিনি ৪৩টি পাঁচ উইকেট এবং ১৩টি ম্যাচে দশ উইকেট নিয়েছিলেন। তাঁর বোলিংয়ের শ্রেষ্ঠ ফিগার ৮/১৬ রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে একটি মাইলফলক। তিনি শুধুমাত্র একজন খেলোয়াড়ই ছিলেন না, তরুণ ক্রিকেটারদের জন্যও প্রেরণার উৎস ছিলেন। অবসরের পর তিনি মুম্বই রঞ্জি দলের কোচিংয়ে যুক্ত হন এবং হারমিত সিং-এর মতো প্রতিভার সন্ধান দেন, যিনি পরে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দল ও মুম্বইয়ের হয়ে খেলেছেন।

মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে এক্স-এ লিখেছেন, “প্রাক্তন মুম্বই ক্রিকেটার পদ্মাকর শিবালকরের প্রয়াণের খবর খুবই দুঃখজনক। তাঁর বাঁ-হাতি অর্থোডক্স বোলিং দিয়ে তিনি অনেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে পথ দেখিয়েছিলেন। তাঁর প্রয়াণে ক্রিকেট জগৎ একটি তারকা হারাল। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি এবং পরিবার ও ভক্তদের এই শোক সহ্য করার শক্তি দিন। আন্তরিক সমবেদনা।”

ক্রিকেট জগতে শোকের ছায়া
পদ্মাকর শিবালকরের প্রয়াণে ক্রিকেট সম্প্রদায় শোকাহত। তাঁর সমসাময়িক এবং পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটাররা তাঁর অবদানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রাক্তন কর্ণাটক ও ভারতীয় পেসার দোদ্দা গণেশ বলেন, “পদ্মাকর শিবালকর স্যার নিঃসন্দেহে ভারতের হয়ে খেলার যোগ্য একজন শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি খেলার জন্য যে অবদান রেখেছেন, তা অপরিমেয়। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।”

পদ্মাকর শিবালকরের প্রয়াণ মুম্বই ক্রিকেটের একটি যুগের অবসান ঘটাল। তিনি জাতীয় দলে না খেললেও তাঁর ৫৮৯ উইকেট এবং রঞ্জি ট্রফির কীর্তি তাঁকে অমর করে রাখবে। তাঁর সাধনা, নিষ্ঠা এবং খেলার প্রতি ভালোবাসা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।