বাংলাদেশের টেকনিক্যাল প্রতিনিধি দল সোমবার কলকাতায় পৌঁছেছে ভারতের সাথে গঙ্গা নদীসহ পারস্পরিক জল শেয়ারিং নিয়ে আলোচনা করার জন্য। এই প্রতিনিধি দলটি ১২ সদস্যের, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মুহাম্মদ আবুল হোসেন। প্রতিনিধিদলটি গঙ্গার প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করতে ফরাক্কা অঞ্চলে ৫ মার্চ পর্যন্ত অবস্থান করবে। এরপর তারা কলকাতায় ফিরে আসবে এবং ৬ ও ৭ মার্চ কলকাতার হায়াৎ রিজেন্সি হোটেলে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের অধীনে দুটি বৈঠক করবে।
জরুরি বিষয়গুলো আলোচনা করার জন্য দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। একটি বৈঠক গঙ্গা চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করবে এবং অন্যটি বৈঠকটি পারস্পরিক নদীগুলির বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয়ে আলোচনা করবে, জানিয়েছেন জেআরসি-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী শাহিদুর রহমান। তিনি আরও জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলটি ৮ মার্চ ঢাকায় ফিরে যাবে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ৫৪টি নদী রয়েছে, যার মধ্যে গঙ্গা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে গঙ্গার জল শেয়ারিং নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ ছিল, কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর গঙ্গা জল চুক্তি সই হওয়ার পর সেই সমস্যার সমাধান হয়। সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন।
এই চুক্তি ৩০ বছর মেয়াদি ছিল এবং এটি পুনর্নবীকরণের জন্য দুই দেশের সম্মতি নিয়ে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে, এবং এটি পুনর্নবীকরণের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও তিস্তা নদীর জল শেয়ারিং চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, যদিও ২০১১ সালে ভারত ও বাংলাদেশ এর খসড়া চুক্তি গ্রহণ করেছিল।
বাংলাদেশে বন্যার পূর্বাভাস সংক্রান্ত তথ্য শেয়ারিংয়ের একটি ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে ভারতের পক্ষ থেকে গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র এবং বরাক নদীর ওপর বন্যার পূর্বাভাস তথ্য বাংলাদেশের কাছে প্রেরণ করা হয়। ভারতের দেওয়া এই তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যা সিভিল ও সামরিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে।
বাংলাদেশের জল সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতে, এই ব্যবস্থা বন্যার সময় বাংলাদেশের নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচন করছে। যেখানে নদী স্রোত এবং জল শেয়ারিংয়ের সমাধান দুই দেশের জনগণের জন্য একটি মঙ্গলজনক ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে।