মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আবারও বাকস্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে (Supreme Court)। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রের নির্দেশে সোশাল মিডিয়ার একাধিক পোস্ট এবং অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীকে না জানিয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছে সফটওয়্যার ফ্রিডম ল সেন্টার।
এই মামলার শুনানির সময়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গভই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহ্ বলেন, কোন পোস্ট বা অ্যাকাউন্ট মুছে দেওয়ার আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীকে জানানো উচিত। এরপরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এর মাধ্যমে আদালত কেন্দ্রের কার্যপদ্ধতির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
মামলাকারীর হয়ে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই সংস্থাগুলিকে নোটিস পাঠানো হলেও ব্যবহারকারীদের জানানো হয় না কেন তাদের পোস্ট বা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হলো। তিনি আরও জানান, আইনের খারাপ ব্যবহারে কেন্দ্র তার সিদ্ধান্ত গোপন রেখে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইন্দিরা জয়সিং সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর উদাহরণও দেন, যিনি কিছু বছর আগে সমাজমাধ্যমে তার অ্যাকাউন্ট আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তবে, কোন পোস্ট বা কারণে তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও তথ্য প্রদান করা হয়নি।
এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি গভই এবং মাসিহ্ বলেন, এটি একটি গুরুতর সমস্যার বিষয়। সরকারের কর্তব্য হলো নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখা। সরকারের দায়িত্ব মানুষের মতামত প্রকাশের অধিকার রক্ষা করা কিন্তু যদি সরকার সেই অধিকার রুদ্ধ করে দেয়, তবে সেটি গণতন্ত্রের মূলনীতি বিরোধী হবে।
এদিকে, কেন্দ্রের এই নীতির বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিবাদ উঠেছে। আদালত কেন্দ্রকে সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে, জনগণের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করা একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের এই পদক্ষেপ জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে, যা আইনত অবৈধ হতে পারে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এখনো কোনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে, সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে, তারা দ্রুত এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে জনসাধারণের কাছে তা প্রকাশ করুক। একই সঙ্গে আদালত মন্তব্য করেছে, সারা বিশ্বে বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকার একেবারে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত।
এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্র এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় এবং জনগণের মতামতকে কীভাবে গুরুত্ব দেয়। সোশাল মিডিয়ায় সরকারি হস্তক্ষেপের পরিণতি এবং এর প্রভাব দেশ ও সমাজে কেমন হবে, তা সময়ই বলবে। তবে, এটি স্পষ্ট যে, বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে কোনও রকম সমঝোতা হতে পারে না এবং জনগণের অধিকার রক্ষায় আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন।