Kunal Ghosh Slams Himanta: মমতার সমর্থনে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর নিন্দায় ‘বিস্ফোরক’ কুণাল

তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) রবিবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সাম্প্রতিক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। শর্মার বক্তব্যকে “বাজে কথা (ননসেন্স)” বলে…

Kunal Ghosh vs Himanta Biswa Sarma

তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) রবিবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সাম্প্রতিক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। শর্মার বক্তব্যকে “বাজে কথা (ননসেন্স)” বলে সমালোচনা করে ঘোষ দাবি করেছেন যে, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সব ধর্মের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে শর্মার একটি মন্তব্য থেকে, যেখানে তিনি কলকাতায় ‘বিবেকানন্দ সেবা সম্মান ২০২৫’ অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধীর উদ্দেশে বলেছেন যে, তারা যদি হিন্দু ধর্মকে শেষ করার কথা ভাবেন, তবে তা কখনো সম্ভব নয়।

কুণাল ঘোষ এই মন্তব্যের জবাবে বলেন, “আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বাজে কথা বলছেন। তাঁর দল হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান—এইভাবে ভাগ করে রাজনীতি করে। কিন্তু এটা বাংলা। এখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান—সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থক।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলার সম্প্রীতির মূলে রয়েছে মমতার উন্নয়ন প্রকল্প, যেগুলো কোনো ধর্মের নামে চিহ্নিত নয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি দুর্গাপুজোর জন্য মমতা সরকারের অর্থ সাহায্যের কথা তুলে ধরেন। “বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি দুর্গাপুজো কমিটিকে অর্থ দেন। করোনার সময় এই অনুদান বাড়ানো হয়েছিল, যার বিরোধিতা করেছিল বিজেপি। এখন তারা এসব বিবৃতি দিচ্ছে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এসবে জড়ানো উচিত নয়,” বলেন ঘোষ।

kolkata24x7-sports-News

   

শর্মার মন্তব্য ও ধর্মের প্রসঙ্গ
এর আগে রবিবার, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “ঔরঙ্গজেব হিন্দু ধর্মকে ধ্বংস করার শপথ নিয়েছিলেন, কিন্তু হিন্দু ধর্ম শেষ হয়নি, ঔরঙ্গজেব শেষ হয়ে গিয়েছিলেন। আজ আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাহুল গান্ধীকে বলতে চাই, যদি তারা মনে করেন যে তারা হিন্দু ধর্মকে শেষ করতে পারবেন, তবে আমি বলব, হিন্দু ধর্ম কখনো শেষ হবে না।” তিনি আরও বলেন, ভারতে যখনই ধর্মের উপর হুমকি এসেছে, মানুষ তার রক্ষার জন্য সোচ্চার হয়েছেন।

শর্মা এই মন্তব্য করেন কলকাতায় ‘স্বামী বিবেকানন্দ সেবা পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে স্বামী প্রদীপ্তানন্দকে সম্মানিত করার সময়। তিনি বলেন, “আজ আমরা স্বামী প্রদীপ্তানন্দকে এই পুরস্কারে সম্মানিত করেছি। ভারতে যখনই ধর্মের উপর হুমকি এসেছে, মানুষ তার রক্ষার জন্য কণ্ঠ তুলেছেন। স্বামীজি সবসময় ধর্ম রক্ষার পথে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন এবং সনাতন ধর্মের জন্য সবকিছু করার সংকল্প নিয়েছেন। এমন ব্যক্তিত্ব আমাদের জন্য পথপ্রদর্শক।”

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক তরজা
কুণাল ঘোষের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ঘোষের মতে, বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি একত্রিত কারণ তাঁর উন্নয়ন নীতি সব সম্প্রদায়ের জন্য সমানভাবে কাজ করে। তিনি বিজেপির সমালোচনা করে বলেন, “বিজেপি ধর্মের নামে ভাগাভাগি করে, কিন্তু বাংলায় এটা কাজ করে না। এখানে সবাই একসঙ্গে মমতার পাশে দাঁড়ায়।”

এদিকে, শনিবার বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বাংলার মানুষকে তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বামপন্থীরা বাংলা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যারা বাকি আছে, তারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তৃণমূল সবসময় সহিংসতা ছড়ায়।” তিনি আরও যোগ করেন, “আজ তৃণমূল নেতারা বিক্ষোভ করছেন, কিন্তু যখন বামপন্থী ছাত্ররা রাজ্যপালের উপর হামলা করেছিল, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল তা সমর্থন করেছিল। আমরা মানুষকে আহ্বান জানাই, যেমন তারা সিপিআই(এম)-কে বাংলা থেকে মুছে দিয়েছে, তেমনি তৃণমূলকেও মুছে ফেলুন।”

বাংলার সম্প্রীতি ও মমতার নীতি
কুণাল ঘোষের বক্তব্যে বাংলার সম্প্রীতি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতির প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “বাংলায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই। এটাই এখানকার মানুষের একতার রহস্য।” তিনি দুর্গাপুজোর জন্য সরকারি অনুদানের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “করোনার সময়ও মমতা দুর্গাপুজোর জন্য অনুদান বাড়িয়েছিলেন। বিজেপি এর বিরোধিতা করলেও বাংলার মানুষ মমতার পাশে দাঁড়িয়েছে।”

অন্যদিকে, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাঁর বক্তব্যে ধর্মীয় ঐক্য এবং সনাতন ধর্মের শক্তির কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “ভারতে ধর্মের উপর যখনই হুমকি এসেছে, মানুষ তার রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। স্বামী প্রদীপ্তানন্দের মতো ব্যক্তিত্ব আমাদের জন্য প্রেরণা।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
এই বিতর্ক বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের একটি নতুন অধ্যায়। বাংলায় তৃণমূলের শক্তিশালী উপস্থিতি এবং বিজেপির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে এই বাকযুদ্ধ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিজেপি যেখানে তৃণমূলকে সহিংসতা ও বামপন্থী সমর্থনের অভিযোগে আক্রমণ করছে, সেখানে তৃণমূল বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতির সমালোচনা করে বাংলার সম্প্রীতির কথা তুলে ধরছে।

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং কুণাল ঘোষের এই বাকযুদ্ধ বাংলার রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল যেখানে বাংলার সম্প্রীতি ও উন্নয়নের দাবি করছে, সেখানে বিজেপি তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এই ঘটনা আগামী দিনে বাংলার রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।