অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM)-এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি (Asaduddin Owaisi) শনিবার দাবি করেছেন যে, আমেরিকান ইতিহাসবিদ রিচার্ড এম ইটন তাঁর বইয়ে লিখেছেন যে, মুসলিম শাসনকালে ভারতে মাত্র ৮০টি মন্দির ধ্বংস করা হয়েছিল।
ওয়াইসি বলেন, “মিডিয়ায় সর্বত্র প্রচার করা হয় যে, ৪০০ বছর আগে মন্দির ধ্বংস করা হয়েছিল। অথচ রিচার্ড এম ইটন তাঁর বই ‘টেম্পল ডেসেক্রেশন অ্যান্ড দ্য মুসলিম স্টেটস ইন মিডিয়েভাল ইন্ডিয়া’-তে লিখেছেন যে, ১১শ শতক থেকে ১৬০০ সাল পর্যন্ত মুসলিম শাসনামলে মাত্র ৮০টি মন্দির ধ্বংস হয়েছিল।”
ইতিহাসের অন্য দিক তুলে ধরলেন ওয়াইসি
ওয়াইসি শুধুমাত্র মুসলিম শাসকদের মন্দির ধ্বংসের বিষয়টিকেই নয়, বরং অন্য ধর্মের শাসকদের কর্মকাণ্ডও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “পুষ্যমিত্র শুঙ্গ, যিনি শুঙ্গ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, তিনি হাজার হাজার বৌদ্ধ উপাসনাস্থল ধ্বংস করেছিলেন। এই বিষয়ে কি আপনারা কোনো সিনেমা তৈরি করবেন?”
তিনি আরও বলেন, “পল্লব সম্রাট নরসিংহবর্মন প্রথম ১৬৪০ সালে চালুক্যের রাজধানী বাতাপী থেকে একটি গণেশ মূর্তি চুরি করেছিলেন। হিউয়েন সাঙ লিখেছেন যে, সম্রাট শশাঙ্ক একটি বোধিবৃক্ষ কেটে ফেলেছিলেন।”
মুঘলদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বক্তব্য
মুঘলদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ওয়াইসি বলেন, “মুঘলরা শুধুমাত্র তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেছিল। ১০ম শতাব্দীতে রাজা ইন্দ্র কালপ্রিয়া মন্দির ধ্বংস করেছিলেন। এখন আমাকে বলা হয় এ বিষয়ে কথা বলতে। আমি কেন মুঘলদের পক্ষ নেব? তারা তো সম্রাট ছিল, তাদের কোনো ধর্ম ছিল না। তারা ধর্মকে তাদের রাজত্ব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল।”
বিজেপি ও মোদির বিরুদ্ধে তোপ
ওয়াইসি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, “যদি মোদি এবং বিজেপি সত্যিই ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, তাহলে তারা মরাঠাদের জন্য সংরক্ষণ ঘোষণা করুক। কেন তারা সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না?”
যোগী আদিত্যনাথকে কটাক্ষ
ওয়াইসি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উর্দু ভাষা নিয়ে সাম্প্রতিক মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এটি পরিষ্কার যে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী উর্দু জানেন না। তবে তিনি কেন বিজ্ঞানী হননি, সেটির উত্তর কেবল তিনিই দিতে পারবেন… যে আদর্শ থেকে তিনি এসেছেন, সেই আদর্শের কোনো ব্যক্তি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “যোগী আদিত্যনাথ গোরখপুর থেকে এসেছেন। রঘুপতি সাহায় ‘ফিরাক’ও গোরখপুর থেকে এসেছিলেন। তিনি একজন বিখ্যাত উর্দু কবি ছিলেন, কিন্তু তিনি মুসলিম ছিলেন না… এটি তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যকেই প্রতিফলিত করে।”
ওয়াইসির এই বক্তব্য আবারও প্রমাণ করে যে, ভারতের ইতিহাস ও রাজনীতিতে ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত আলোচনা চলতেই থাকে। তিনি ইতিহাসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পাল্টা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে এই মন্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাবে।