ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি (Voter List Discrepancies) নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তুঙ্গে। ভূয়ো ভোটার নিয়ে রাজ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী বিজেপি একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে। তবে এবার এই বিতর্কে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বিভিন্ন রাজ্যে বহু ভোটারের একই এপিক নম্বর (EPIC Number) রয়েছে, যা ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এই গরমিল আসলে ভূয়ো ভোটার তৈরি করার একটি ষড়যন্ত্র। যদিও নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে এবং নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা
জাতীয় নির্বাচন কমিশন তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘দুই রাজ্যের ভোটারের একই এপিক নম্বর মানে এই নয় যে সেই ব্যক্তি ভূয়ো ভোটার।’’ কমিশনের যুক্তি, ‘‘ভোটার কার্ড তৈরি ও বিলির সময় অতীতে স্থানীয়ভাবে কিছু কারিগরি সমস্যা দেখা গিয়েছিল। তার ফলে কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্যের ভোটারদের একই ধরনের এপিক নম্বর দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে এতে ভোটারদের স্বতন্ত্র পরিচয়ে কোনও পরিবর্তন আসবে না।’’
কমিশনের আরও বক্তব্য, ‘‘একই এপিক নম্বর থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ভোটারের অন্যান্য তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, বিধানসভা কেন্দ্র ও পোলিং বুথ সব আলাদা থাকে। ফলে তিনি শুধুমাত্র সেই রাজ্যেই ভোট দিতে পারবেন, যেখানে তাঁর নাম ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত রয়েছে।’’
Also Read | Adhir Ranjan Chowdhury: “বাংলা সরকার ভুয়ো ভোটার তৈরির বিশেষজ্ঞ” বলে অভিযোগ অধীরের
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ভোটার তালিকার গরমিল নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি পরস্পরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, ‘‘বিজেপি চক্রান্ত করে ভোটার তালিকায় গরমিল সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন রাজ্যে নিজেদের সুবিধামতো ভোটারদের স্থানান্তরিত করছে। কমিশন নিরপেক্ষ না হলে গণতন্ত্র বিপদের মুখে পড়বে।’’
অন্যদিকে, বিজেপি পাল্টা দাবি করেছে, ‘‘তৃণমূল সরকার ভূয়ো ভোটারদের সাহায্যে ভোট কারচুপির চেষ্টা চালাচ্ছে। বহু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে বেআইনিভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে তদন্ত করতে হবে।’’
ভোটার তালিকা সংস্কারে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ‘‘ভোটারদের মধ্যে কোনও বিভ্রান্তি দূর করতে ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে আমরা ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছি। যাঁদের এপিক নম্বর একই রয়েছে, তাঁদের জন্য ইউনিক এপিক নম্বর দেওয়ার কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে এই তথ্য আপডেট করা হচ্ছে।’’
কমিশনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, ‘‘নির্বাচনের সময় ভোটারদের স্বতন্ত্র পরিচয় নিশ্চিত করতে আধার লিঙ্কিং ও বায়োমেট্রিক যাচাই প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হবে।’’
ভোটারদের করণীয়
ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কোনও বিভ্রান্তি থাকলে, ভোটারদের নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল পোর্টালে গিয়ে তাঁদের তথ্য যাচাই করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এই ব্যাখ্যার পর বিতর্ক কিছুটা কমবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবে ভূয়ো ভোটার বিতর্কে রাজনৈতিক তরজা যে চলতেই থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।