বিধানসভা ভোটের আগে বাংলার শাসকদল (TMC) দুর্নীতি ইস্যুতে আপোষহীন নীতির পথে হাঁটছে। বিশেষ করে পুর এবং আবাস দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল এখন কোনও আপোষ করতে রাজি নয়। শাসক দল স্পষ্ট জানিয়েছে যে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তৃণমূলের নেতৃত্ব বলছে, দুর্নীতি নিয়ে কোনও আপোষ করা হবে না এবং যে কোনো অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে।
গত কয়েক বছর ধরে পুর ও আবাস নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ একের পর এক সামনে এসেছে। বিরোধী দলের মতে, তৃণমূলের (TMC) স্থানীয় নেতারা এবং কিছু শাসক দলের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা দুর্নীতিতে জড়িত। এসব অভিযোগে স্বজনপোষণ, কাটমানি, অনৈতিকভাবে সরকারি সম্পত্তি ব্যবহার করার মতো বিষয় উঠে এসেছে। তবে আসন্ন বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে তৃণমূল দলের নেতারা এখনই এসব সমস্যার মোকাবিলা করতে চাইছেন, যাতে বিরোধীরা কোনোভাবেই রাজনৈতিক সুবিধা নিতে না পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের (TMC) উদ্দেশ্য হল নিজের দলের ভিতর শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা। যাতে ভবিষ্যতে এই দুর্নীতি ইস্যুতে কোনো রাজনৈতিক ক্ষতি না হয়। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে শাসক দলকে এখন থেকেই এই সমস্ত ইস্যুতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। একে অপরকে দায়ী করার জায়গা তৈরি হলে তৃণমূলের বিরোধীরা এই দুর্নীতি ইস্যুকে ভোটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) বর্তমানে পুর এবং আবাস নির্মাণের দুর্নীতি নিয়ে যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা তার কার্যকরী শুদ্ধিকরণের অংশ। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার বেলাগাম বেআইনি পার্কিং নিয়েও শাসক দলের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, যারা বেআইনি পার্কিং ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। শাসকদল এখন এই ইস্যুতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা সুব্রত বক্সী সম্প্রতি ভবানীপুরে একটি বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে বন্দর এলাকার বেআইনি পার্কিং ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে ছিলেন দলের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা। উপস্থিত ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম। তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল, কীভাবে শহরের বেআইনি পার্কিং সমস্যার সমাধান করা যায়। এসব নিয়েই তৃণমূলের শাসক দল এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে চাইছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের এই ‘নো কম্প্রোমাইজ’ নীতি শুধুমাত্র পুর এবং আবাস দুর্নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দলের শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দলটি ভোটার লিস্টে ‘ভূত’ খুঁজে বের করতে চাচ্ছে। এই বিষয়ে তৃণমূল নেতারা সক্রিয় হয়েছেন এবং ভোটার লিস্টে যারা অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছেন, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ ভৌমিক সহ দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা এই কাজের তদারকি করছেন। ভোটার লিস্টের সঠিক ভোটদাতা নিশ্চিত করতে তৃণমূলের জেলা ভিত্তিক তালিকা তৈরি হচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে এটি আরও কার্যকরী করে তোলা হবে।
সুব্রত বক্সী এবং তার সহকর্মীরা এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। এই তালিকা জমা পড়বে দলের সুপ্রিমো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের এই পদক্ষেপগুলো দলের শুদ্ধিকরণ এবং দুর্নীতি ইস্যুতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের নির্দেশক হতে পারে। তবে, এসব পদক্ষেপ শুধু দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় সাহায্য করবে না, তা আসন্ন বিধানসভা ভোটেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।