Adhir Ranjan Chowdhury: “বাংলা সরকার ভুয়ো ভোটার তৈরির বিশেষজ্ঞ” বলে অভিযোগ অধীরের

কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) শনিবার (১ মার্চ) পশ্চিমবঙ্গে “লক্ষ লক্ষ ভুয়ো ভোটার”-এর অস্তিত্বের অভিযোগ তুলে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি)…

Congress High Command forbade Adhir Chowdhury from leaving Delhi banglow indicating that he would become a Rajya Sabha MP, দিল্লির বাংলো ছাড়তে নিষেধ করে অধীর চৌধুরীকে রাজ্যসভায় পাঠানোর ইঙ্গিত কংগ্রেস হাইকমান্ডের

কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) শনিবার (১ মার্চ) পশ্চিমবঙ্গে “লক্ষ লক্ষ ভুয়ো ভোটার”-এর অস্তিত্বের অভিযোগ তুলে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বাংলা সরকারকে “ভুয়ো ভোটার তৈরির বিশেষজ্ঞ” হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই প্রবণতা বহু বছর ধরে চলে আসছে। এই অভিযোগের মধ্য দিয়ে তিনি দাবি করেছেন যে, রাজ্যে শাসক দল নির্বাচনে কারচুপির জন্য এই ভুয়ো ভোটারদের ব্যবহার করে।

এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চৌধুরী বলেন, “এখানে লক্ষ লক্ষ ভুয়ো ভোটার রয়েছে। যেখানেই শাসক দল কারচুপি করে, সেটা মহারাষ্ট্র হোক বা বাংলা, সেখানে আপনি অবশ্যই ভুয়ো ভোটার পাবেন। শুধু একজন নয়, লক্ষ লক্ষ। বাংলা সরকার ভুয়ো ভোটার তৈরিতে বিশেষজ্ঞ, এটা আজ থেকে নয়, বহু বছর ধরে চলছে। এজন্যই এই জায়গাটি ভুয়ো ভোটারে ভরে গেছে।” তাঁর এই মন্তব্য রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

kolkata24x7-sports-News

   

কংগ্রেসের জাতীয় স্তরে উদ্বেগ
কংগ্রেসের জাতীয় নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গুলাম আহমেদ মীরও এই ইস্যুতে মুখ খুলেছেন। তিনি এএনআই-কে কলকাতায় বলেন, “আমরা মহারাষ্ট্রে এই ইস্যুটি তুলেছিলাম। সেখানে ভুয়ো ভোটারের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এখন দেখা গেছে, ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, বাস্তবে তাঁদের অস্তিত্ব নেই। কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা একটি জাতীয় স্তরের ওয়ার রুম তৈরি করব, যা ভোটার তালিকা পর্যবেক্ষণ করবে। যেখানেই নির্বাচন হবে, এই ওয়ার রুম রাজ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে কাজ করবে। আমাদের নিজেদের স্তরে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সময়মতো হস্তক্ষেপ করতে হবে যাতে এই কারচুপি বন্ধ করা যায়।”

মীরের এই মন্তব্য এই সমস্যার জাতীয় মাত্রা তুলে ধরে। তিনি মহারাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম যোগ করা হয়েছিল, যা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে। তিনি বাংলাতেও একই ধরনের কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ
এই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দাবি করেছিলেন, বিজেপি নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদে ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনারের অফিসে বসে তারা অনলাইনে ভুয়ো ভোটার তালিকা তৈরি করেছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় ভুয়ো ভোটার যোগ করা হয়েছে। এই কৌশল ব্যবহার করে তারা দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রে নির্বাচনে জিতেছে। মহারাষ্ট্রের বিরোধীরা এই তথ্য ধরতে পারেনি। বেশিরভাগ ভুয়ো ভোটার হরিয়ানা এবং গুজরাতের। বাংলার সংস্কৃতি স্বাধীনতার জন্ম দিয়েছে।” মমতা রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ভোটার তালিকার অনিয়ম পরীক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মমতার এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “১৯৫০ সালের আরপি অ্যাক্ট, ১৯৬০ সালের ভোটার নিবন্ধন নিয়ম এবং ইলেক্টোরাল রোলস ম্যানুয়াল অনুযায়ী, রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট বিএলও, এইআরও, ইআরও, ডিইও এবং সিইও ভোটার তালিকা আপডেট করেন। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর নিযুক্ত বুথ লেভেল এজেন্টদের সক্রিয় অংশগ্রহণে করা হয়। কোনো নির্দিষ্ট দাবি বা আপত্তি থাকলে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের ৮০,৬৩৩ বিএলও, ৩,০৪৯ এইআরও এবং ২৯৪ ইআরও-এর কাছে জানাতে হবে।” সিইও-এর এই বক্তব্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনো কারচুপির দাবি অস্বীকার করা হয়েছে।

রাজনৈতিক তরজা
অধীর রঞ্জন চৌধুরীর এই অভিযোগ তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধকে আরও উসকে দিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, তৃণমূল বছরের পর বছর ধরে এই কৌশল ব্যবহার করে রাজ্যে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করছে। পাল্টা হিসেবে মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, বিজেপি হরিয়ানা, গুজরাত, বিহার, পাঞ্জাব এবং রাজস্থান থেকে ভোটারদের নাম বাংলার তালিকায় যোগ করে ম্যানিপুলেশন করছে।

বিজেপি এই অভিযোগের জবাবে বলেছে, মমতার এই বক্তব্য তাঁর দলের কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য। বিজেপির রাজ্য নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেন, “তৃণমূল ভোট লুঠ এবং নির্বাচনী কারচুপির জন্য বিখ্যাত। মমতা জানেন, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে তিনি হারতে চলেছেন। তাই এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে দলের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।” তিনি আরও দাবি করেন, বাংলার হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, যা তৃণমূলকে ভয় দেখাচ্ছে।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় উদ্বেগ
এই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেস এবং তৃণমূল উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। গুলাম আহমেদ মীর জানিয়েছেন, কংগ্রেস একটি জাতীয় স্তরের ওয়ার রুম গঠন করবে, যা ভোটার তালিকার নজরদারি করবে। এই পরিকল্পনা ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ রাজ্য স্তরে এই সমস্যা মোকাবিলার একটি পদক্ষেপ। তিনি দাবি করেছেন, বাংলার সংস্কৃতি এবং স্বাধীনতার চেতনা এই কারচুপি রুখে দেবে। তবে, নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া এই অভিযোগগুলোর ভিত্তি নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ২১৩টি আসন জিতে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে, যেখানে বিজেপি ৭৭টি আসনে জয়ী হয়। কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের জোট তেমন সাফল্য পায়নি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে অধীর রঞ্জন চৌধুরী বহরমপুরে তৃণমূলের ইউসুফ পঠানের কাছে হেরে যান। এই পরাজয় তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবের ওপর প্রশ্ন তুলেছে। তবুও, তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই অব্যাহত রেখেছেন।

ভবিষ্যৎ প্রভাব
এই অভিযোগগুলো ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে এই বিরোধ ইন্ডিয়া জোটের ঐক্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিজেপি এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজ্যে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে, এই বিতর্ক আরও জটিল হবে।

এই ঘটনা বাংলার নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। জনগণ এখন অপেক্ষায় আছে, দেখার জন্য কীভাবে এই অভিযোগগুলো সমাধান হয়।