প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) শনিবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় তিন দিনের সফরে তাঁর গৃহরাজ্য গুজরাতে পৌঁছেছেন। তিনি জামনগর বিমানবন্দরে অবতরণের মাধ্যমে এই সফর শুরু করেন। তাঁর চূড়ান্ত সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী আজ রাতে জামনগর সার্কিট হাউসে থাকবেন। এই সফরে তিনি জামনগরের ভানতারা প্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, সাসান গির জাতীয় উদ্যান এবং সোমনাথ মহাদেব মন্দির পরিদর্শন করবেন। গুজরাতের মন্ত্রী মুলুভাই বেরা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের জন্য জামনগর, দ্বারকা এবং গির জেলায় সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ রাতে জামনগর সার্কিট হাউসের প্রথম তলায় রঙ্গমতি কক্ষে থাকবেন। রবিবার (২ মার্চ) সকালে তিনি জামনগরে রিলায়েন্স পরিচালিত ভানতারা পরিদর্শন করবেন। এই কেন্দ্রটি একটি অত্যাধুনিক প্রাণী উদ্ধার, সংরক্ষণ এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র, যা ৩,০০০ একর জুড়ে বিস্তৃত। এরপর তিনি জুনাগড় জেলার সাসানে যাবেন, যেখানে গির জাতীয় উদ্যানের সদর দফতর রয়েছে। সোমবার (৩ মার্চ) তিনি গির জেলার সোমনাথে পৌঁছে সোমনাথ মহাদেব মন্দিরে প্রার্থনা করবেন।
গুজরাতের মন্ত্রী মুলুভাই বেরা এএনআই-কে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জামনগরে আসছেন এবং গোটা শহর তাঁকে স্বাগত জানাতে উচ্ছ্বসিত। তিনি জামনগর এবং সৌরাষ্ট্রের প্রতি গভীরভাবে যত্নশীল এবং নিয়মিত এখানে আসেন। সমস্ত ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে। জামনগর ও দ্বারকা জেলা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তিনি আগামীকাল সকালে জামনগরে ভানতারা পরিদর্শন করবেন, এরপর গির জেলায় সোমনাথ মন্দিরে যাবেন।” তিনি আরও জানান, এই সফরে প্রধানমন্ত্রী গির জাতীয় উদ্যানে একটি জঙ্গল সাফারি উপভোগ করবেন এবং জাতীয় বন্যপ্রাণী বোর্ডের (এনবিডব্লিউএল) একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন।
ভানতারা দিয়ে শুরু, সোমনাথে শেষ
প্রধানমন্ত্রীর এই তিন দিনের সফরে জামনগরে ভানতারা পরিদর্শন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পরিচালিত এই কেন্দ্রটি উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণী এবং বিপন্ন প্রজাতির জন্য একটি আশ্রয়স্থল। ২ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের প্রাক্কালে এই পরিদর্শন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এরপর তিনি সাসান গির জাতীয় উদ্যানে যাবেন, যেখানে এশিয়াটিক সিংহের একমাত্র প্রাকৃতিক আবাসস্থল রয়েছে। এই সফরে তিনি গিরে একটি জঙ্গল সাফারি উপভোগ করবেন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনার জন্য এনবিডব্লিউএল-এর বৈঠকের নেতৃত্ব দেবেন।
৩ মার্চ সোমবার তিনি গির সোমনাথ জেলার সোমনাথ মহাদেব মন্দিরে পৌঁছে প্রার্থনা করবেন। এই মন্দিরটি ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রথম এবং হিন্দু ধর্মে এর অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী সোমনাথ ট্রাস্টের সভাপতি হিসেবে এই মন্দির পরিচালনা কমিটির একটি বৈঠকেও সভাপতিত্ব করবেন। এই ট্রাস্টের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির প্রবীণ নেতা এল কে আদভানি এবং কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ। মন্দির পরিদর্শন ও বৈঠক শেষ করে তিনি রাজকোট বিমানবন্দর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবেন।
জামনগরে উষ্ণ স্বাগত
প্রধানমন্ত্রী জামনগর বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাঁর গাড়িবহর যখন সার্কিট হাউসের দিকে যায়, তখন রাস্তার দু’পাশে বহু মানুষ তাঁকে স্বাগত জানাতে ভিড় করেন। জামনগরে তাঁর আগমন শহরে উৎসাহের জোয়ার এনেছে। গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এবং সৌরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্কের কারণে এই অঞ্চলের মানুষ তাঁকে বিশেষভাবে সম্মান করে। মন্ত্রী বেরা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সৌরাষ্ট্রে নিয়মিত আসেন। তাঁর এই সফর জামনগর ও দ্বারকার জন্য গর্বের।”
প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য কর্মসূচি
এই সফরের আগে শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদী দিল্লিতে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যিনি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। দিল্লির দিল্লি হাটে তিনি অ্যাবটের সঙ্গে মিলেট-ভিত্তিক খাবার উপভোগ করেন। এক্স-এ একটি ছবি শেয়ার করে মোদী লেখেন, “আমার ভালো বন্ধু এবং প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আনন্দিত। তিনি সবসময় ভারতের বন্ধু ছিলেন। তাঁর এই সফরে আমরা তাঁর মিলেটের প্রতি ভালোবাসা দেখেছি।” শুক্রবার দিল্লি হাটের মিলেটস এক্সপেরিয়েন্স সেন্টারে অ্যাবট মিলেট-ভিত্তিক খাবার চেখে দেখেন এবং এর বৈচিত্র্যে মুগ্ধ হন।
মিলেটস এক্সপেরিয়েন্স সেন্টারটি ২০২৩ সালের এপ্রিলে প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর এবং ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (নাফেড)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজবীর সিং-এর উদ্যোগে চালু হয়েছিল। এই কেন্দ্রটি মিলেটের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং জনসাধারণের মধ্যে এর ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে।
গুজরাতে প্রধানমন্ত্রীর সফরের তাৎপর্য
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর গুজরাতের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যের উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। এই সফরে তিনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করবেন। ভানতারা পরিদর্শন এবং গির জাতীয় উদ্যানে সাফারি তাঁর পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি আগ্রহের প্রতিফলন। সোমনাথ মন্দিরে প্রার্থনা এবং ট্রাস্টের বৈঠক তাঁর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।
গুজরাতের মানুষ তাঁর এই সফরকে উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। জামনগরে তাঁর আগমনে রাস্তায় ভিড় জমেছে, যা তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ। সৌরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক এই সফরে আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে। এই তিন দিনে তিনি রাজ্যের বিভিন্ন দিক—প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী এবং ধর্ম—স্পর্শ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর ৩ মার্চ রাজকোট বিমানবন্দর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার মাধ্যমে শেষ হবে। এই সফরে তিনি গুজরাতের উন্নয়ন এবং সংরক্ষণের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন। ভক্ত এবং স্থানীয়রা এই সফর থেকে নতুন উদ্যোগ এবং উন্নয়নের আশা করছেন। গুজরাতে তাঁর এই তিন দিনের উপস্থিতি রাজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।