শিক্ষামন্ত্রীর ভাষণ চলাকালীন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম ছাত্র সংগঠনের তাণ্ডব

শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিশাল হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ভাষণ চলাকালীন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনার সূত্রপাত…

West Bengal Education Minister Bratya Basu

শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিশাল হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ভাষণ চলাকালীন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই (স্টুডেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া) আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল, শিক্ষামন্ত্রীর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় তুমুল প্রতিবাদ হবে। তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিল এবং এমনকি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবি তুলেছিল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যখন ওয়েবকুপারের বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত হন, তখন বাম ছাত্ররা “গেট আউট” পোস্টার লাগিয়ে প্রতিবাদ শুরু করে।

kolkata24x7-sports-News

   

ভাষণ চলাকালীন, বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা প্রবেশ করে এবং সভা স্থলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তারা চেয়ার ভাঙচুর করতে থাকে, ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় এবং বেশ কয়েকজন অধ্যাপক আহত হন। অভিযোগ ওঠে যে, ব্রাত্য বসুর গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয় এবং ক্যাম্পাসে “গো ব্যাক” এবং “থিফ-থিফ” স্লোগান শোনা যায়। শিক্ষামন্ত্রী এই পরিস্থিতি তীব্র ভাষায় নিন্দা করেন এবং বলেন, “এ ধরনের গুন্ডামি চলতে পারে না।”

অন্যদিকে, ক্যাম্পাসে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা বাম ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে পাল্টা স্লোগান শুরু করে। উন্মত্ত পরিবেশে বামপন্থী ছাত্র নেতারা সভার ভিতরে তাদের আন্দোলনের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে, আর বাইরে তৃণমূল ছাত্ররা তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলে। এরপর এসএফআই, আইসিএসএ, ডিএসএফ সদস্যরা শিক্ষামন্ত্রীর দুটি পাইলট গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।

এই ঘটনার পর, ব্রাত্য বসু বাম ছাত্র সংগঠনের আচরণ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যারা এসব করছে, তারা যে মতাদর্শের কথা বলে, সেই মতাদর্শ বিজেপিকে ঠেকাতে কী করেছে? শিক্ষায় গৈরিকীকরণ ঠেকাতে তাদের ভূমিকা কী?” শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, “যে বামপন্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ক চিহ্নিত করি, তা সোভিয়েত রেজিমেন্টেড বামপন্থা নয়, এটা লাতিন আমেরিকার বামপন্থা।”

এছাড়া প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা এক অধ্যাপককে লাঠি দিয়ে তাড়া করে এবং এক মহিলা অধ্যাপকের শাড়ি ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এক ছাত্রের মাথা ফেটে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
ব্রাত্য বসু অভিযোগ করেছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনের নেতৃত্ব এখন আগের মতো নেই। তিনি বলেন, “তারা এখন বিদেশে বা অন্য রাজ্যে চলে গেছেন, তাদের রাজ্য নিয়ে কিছু যায় আসে না। তারা শুধু নিজস্ব স্বার্থে আন্দোলন করছে।”

এই ঘটনা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষোভের প্রমাণ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের সহিংসতা এবং উত্তেজনা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে, যা রাজ্যে ছাত্র রাজনীতির নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক বিভাজন এবং বামপন্থী সংগঠনের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর সংঘর্ষ আরও জটিল হয়ে উঠছে, এবং পরিস্থিতি এখনো থমকে রয়েছে।