সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ উচ্ছেদ (Mangrove Destruction) অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং বন দপ্তরের নজরদারি নেই, যার ফলস্বরূপ প্রতিদিন নির্বিচারে ম্যানগ্রোভ কেটে ফেলা হচ্ছে। ম্যানগ্রোভ গাছ, যা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এখন বিপদের মুখে। বাসন্তী গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়োখালি এলাকার মাটির পাশে, মাতলা নদীর তীরে বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ গাছ রয়েছে, যেমন বাইন, গেঁওয়া এবং কাঁকড়া। এই গাছগুলিই সাইক্লোনের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করে। এই গাছগুলি একের পর এক কেটে ফেলা হচ্ছে।
কিছু লোক এই ম্যানগ্রোভ গাছ কাটছে (Mangrove Destruction) জ্বালানি হিসেবে, কিছু মানুষ তা বিক্রি করছে ইটভাটায়। মাটির বাড়ি তৈরি থেকে শুরু করে বাগানের সবজি চাষের জন্যও ম্যানগ্রোভ ব্যবহার করা হচ্ছে। একদিকে যেখানে ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের পরিবেশের জন্য অপরিহার্য, সেখানে এভাবে অবাধে তাদের কাটা অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মুস্তাফা আলি মোল্লা বলেন, ‘ম্যানগ্রোভ আমাদের কতটা উপকারে আসে, যদি এখানকার মানুষ বুঝত, তাহলে তারা এমনভাবে গাছ কেটে ফেলত না। তবে প্রশাসন যদি কঠোর হতে, তাহলে এই অসচেতন মানুষরা গাছ কাটার সুযোগ পেত না।’ তিনি প্রশাসন থেকে তৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
বাসন্তী এলাকার বিজেপি নেতা বিকাশ সর্দার অভিযোগ করেছেন, ‘এটি তৃণমূলের মদতেই হচ্ছে। ম্যানগ্রোভ কেটে বেআইনি ভেড়ি বানানো হচ্ছে, জায়গা দখল করে বিক্রি করা হচ্ছে গৃহ নির্মাণের জন্য। এই কাজে প্রশাসনের যোগসাজশ রয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, সরকারি সংস্থার নজরদারি বা তদন্তের অভাবের কারণে এই অবস্থা চলছে।
বাসন্তী সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক ইউদ আলি শেখ জানান, ‘ম্যানগ্রোভ কাটা মানে নিজেদেরই সর্বনাশ ডেকে আনা। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।’ তিনি বলেন, ‘এটি যদি বন্ধ না হয়, তাহলে সুন্দরবন ও তার পরিবেশের উপর এর বিপরীত প্রভাব পড়বে।’
তৃণমূল নেতা ও বাসন্তী পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ সাহেব সর্দার বলেন, ‘বিরোধীরা জানেই না, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাসন্তীসহ গোটা সুন্দরবন জুড়ে কোটি কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো হচ্ছে পরিবেশ রক্ষার্থে।’ তিনি আরও জানান, সরকার পরিবেশ রক্ষায় সচেতন এবং ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে, বন দপ্তরের ডিএফও নিশা গোস্বামী জানিয়েছেন, ‘মুড়োখালিতে আমাদের দপ্তরের কর্মীরা গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ তবে দেখা যাচ্ছে যে, বর্তমান পরিস্থিতি যদি দ্রুত না মোকাবিলা করা হয়, তাহলে সুন্দরবনের ঐতিহ্যবাহী ম্যানগ্রোভ বন সঙ্কটে পড়তে পারে।
এ মুহূর্তে, প্রশাসনের প্রতি স্থানীয় জনগণের আহ্বান, একযোগে ম্যানগ্রোভের এই অবৈধ নিধন (Mangrove Destruction) বন্ধ করতে হবে। ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যস্ত না হয়।