পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, এবং জানিয়েছেন যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে আইনি প্রোটোকল মেনে চলে। মমতার এই মন্তব্যের পর, তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যে নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে ভুয়া ভোটার যোগ করার অভিযোগ তুলেছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আরপিএ অ্যাক্ট ১৯৫০, রেজিস্ট্রেশন অফ ইলেকটর্স রুলস ১৯৬০ এবং ম্যানুয়াল অন ইলেকটোরাল রোলস অনুসারে, সংশ্লিষ্ট বুথ স্তরের অফিসার, সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন অফিসার, নির্বাচনী নিবন্ধন অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং মুখ্য নির্বাহী অফিসার রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকা হালনাগাদে কাজ করেন। এই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলের বুথ স্তরের এজেন্টদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়। কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ বা আপত্তি প্রথমে সংশ্লিষ্ট বুথ স্তরের অফিসার ৮০,৬৩৩ , ৩,০৪৯ সহকারী নির্বাচনী নিবন্ধন অফিসার এবং ২৯৪ নির্বাচনী নিবন্ধন অফিসার এর কাছে জানানো উচিত।”
এই প্রতিক্রিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কমিটি গঠন করার পর এসেছে, যা পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় সম্ভাব্য অস্বচ্ছতা তদন্ত করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন যে, বিজেপি বিভিন্ন রাজ্যে ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে নির্বাচনে জিতেছে এবং এখন সেই একই কাজ পশ্চিমবঙ্গেও করছে।
তিনি বলেছেন, “ইলেকশন কমিশনারের অফিসে বসে তারা একটি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছে এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় ভুয়া ভোটার যোগ করা হয়েছে। এই কৌশল ব্যবহার করে তারা দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রে নির্বাচন জিতেছে। মহারাষ্ট্রের বিরোধীরা এই বিষয়টি খুঁজে বের করতে পারেনি। বেশিরভাগ ভুয়া ভোটার হরিয়ানা ও গুজরাট থেকে এসেছে। বিজেপি ইসি-র আশীর্বাদে ভোটার তালিকা প্রভাবিত করছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস এবং সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট এর মাধ্যমে প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হতে পারে। এটি বিজেপির উদ্দেশ্য এবং ইসি-র আশীর্বাদে করা হচ্ছে। আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা পর্যালোচনার জন্য একটি আইটি মিডিয়া সেল, পঞ্চায়েত কাউন্সিলরদের এবং একটি কোর কমিটি গঠনের ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দলের নেতারা ভোটার তালিকা যাচাইয়ের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। কলকাতা মেয়র ফিরহাদ হাকিম দক্ষিণ কলকাতায় এই প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, “বিজেপি অন্য রাজ্য থেকে ভুয়া ভোটার এনে ভোটার তালিকায় যোগ করছে। তাই আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা যাচাই করছি।”
এছাড়া ভব্যানিপুরে, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এলাকা, সেখানেও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, একাধিক ব্যক্তি যাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা নন, তাঁদের একই ভোটার আইডি নম্বরের মাধ্যমে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভোটারদের “ভুতুড়ে ভোটার” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন প্রচারণা এবং ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজ অব্যাহত রয়েছে। ভোট প্রভাবিতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা আগামী নির্বাচনে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।