রমজান মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পবিত্র মাস, যেখানে উপবাসের মাধ্যমে আত্মবিশ্লেষণ এবং আত্মিক উন্নতির প্রচেষ্টা করা হয়। দিনের দীর্ঘ উপবাসের পর ইফতার হলো সবচেয়ে প্রত্যাশিত সময়, যা সূর্যাস্তের পর উপবাস ভাঙার মাধ্যমে শুরু হয়। এই সময়ে পরিবার, বন্ধু এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে সবাই সুস্বাদু খাবার উপভোগ করেন, যা একযোগে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে।
ভারতের বিভিন্ন শহরে রমজান মাসে রাস্তায় চলতে থাকা বাজারগুলো আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার বিক্রি হয়। একদিকে যেমন এই খাবারগুলো মানুষের একত্রিত হওয়ার উপলক্ষ্য, তেমনি দ্বিতীয় দিকে ইফতার সেরে নিতে পারলে তৃপ্তির পরিমাণও দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, ভারতের সেরা কিছু স্ট্রিট ফুড, যেগুলো রমজান মাসে অবশ্যই ট্রাই করতে হবে।
১. হালিম
হালিম একটি ধীরে ধীরে রান্না করা মাংসের স্টু, যা গম, ডাল এবং মাংস (মুরগি, মটন বা গরুর মাংস) দিয়ে তৈরি হয়। এটি দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করা হয়, যাতে এটি একটি ঘন, সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর পেস্টে পরিণত হয়। হায়দ্রাবাদ, লখনৌ এবং দিল্লিতে হালিম অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই খাবারের মধ্যে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন এবং স্বাদ, যা উপবাস ভাঙার পর অত্যন্ত পুষ্টিকর হয়ে ওঠে।
ফেমাস স্পট: পিস্তাহাউস (হায়দ্রাবাদ), আমিনিয়া (কলকাতা), মাতিয়া মহল (দিল্লি)
২. সিক কাবাব
মসলাযুক্ত কিমা মাংস কাঠের লাঠিতে লাগিয়ে গ্রিল করা হয়, যার ফলে একটি সুস্বাদু স্মোকি ফ্লেভার পাওয়া যায়। সিক কাবাব মটন, মুরগি বা গরুর মাংস দিয়ে তৈরি হয় এবং এটি রসালো, কোমল এবং মশলাদার হয়ে থাকে। সাধারণত এটি রুমালি রুটি বা সবুজ চাটনির সাথে খেতে অত্যন্ত মজাদার।
ফেমাস স্পট: দাস্তারখান (লখনৌ), বাদেমিয়া (মুম্বাই), করিমস (দিল্লি)
৩. শাওয়ার্মা রোলস
এটি একটি জনপ্রিয় মধ্যপ্রাচ্যের স্ট্রিট ফুড, যেখানে চিকেন শাওয়ারমা রোল আকারে পরিবেশন করা হয়। রোলটিতে থাকে মশলাদার চিকেন, গার্লিক সস, আচার এবং লেটুস। এটি একটি দ্রুত এবং পুষ্টিকর খাবার, যা রমজান মাসে ইফতার সময় খুবই জনপ্রিয়।
ফেমাস স্পট: খান চাচা (দিল্লি), মারহাবা (হায়দ্রাবাদ), কার্টার রোড (মুম্বাই)
৪. নল্লি নিহারি
নল্লি নিহারি একটি ঐতিহ্যবাহী মুঘল খাবার, যা মটন শ্যাঙ্ক (নল্লি) এবং মশলাদার সস দিয়ে ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। এটি সুমিষ্ট এবং মসলাদার এক ভিন্ন ধরনের খাবার, যা সাধারণত তন্দুরী রুটি বা খামীরি রুটি দিয়ে খেতে হয়। দিল্লি এবং লখনৌতে নল্লি নিহারি খুবই জনপ্রিয়।
ফেমাস স্পট: হাজি শাব্রতি নিহারি (দিল্লি), রহিমস (লখনৌ)
৫. ফিরনি
ইফতার খাবারের মধ্যে মিষ্টান্ন না থাকলে কিছুই সম্পূর্ণ হয় না। ফিরনি একটি মিষ্টি রাইস পুডিং, যা দুধ, চিনি, সাফরন এবং এলাচ দিয়ে তৈরি হয়। এটি সাধারণত মাটির হাঁড়িতে পরিবেশন করা হয়, যা এর স্বাদকে আরও উন্নত করে। ফিরনি ইফতার খাবারের শেষে একটি আদর্শ মিষ্টান্ন।
ফেমাস স্পট: চিতলি কবর বাজার (দিল্লি), ভেন্ডি বাজার (মুম্বাই), চওক বাজার (লখনৌ)
রমজান শুধু আত্মিক উন্নতির সময় নয়, এটি মানুষের মধ্যে একতা, ভালোবাসা এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে একত্রিত হওয়ার একটি সময়। ভারতের বিভিন্ন শহরে রমজান মাসে ইফতার বাজারগুলো খুবই জীবন্ত হয়ে ওঠে, যেখানে অসংখ্য স্ট্রিট ফুডের বিক্রি শুরু হয়। দিল্লি, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ এবং লখনৌতে রমজান এবং ইফতার খাবারের সংস্কৃতি মানুষের মধ্যে একটি আলাদা সম্পর্ক তৈরি করে, যা খাবারের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।
রমজান মাসে ভারতের স্ট্রিট ফুড বাজারে শুধু খাবারের বৈচিত্র্য নয়, সংস্কৃতির সমন্বয়ও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। একদিকে যেমন এসব খাবার ঐতিহ্যবাহী এবং সুস্বাদু, তেমনি অন্যদিকে, এটি সমাজের মধ্যে বন্ধন তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।