শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিশুরা সরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারে। যদি তাঁদের ভর্তি করতে অস্বীকার করা হয়, তাহলে তাঁরা হাইকোর্টে যেতে পারবে। বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং এন কোটিশ্বর সিংহের বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। এনজিও ‘রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ’-এর পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট কলিন গনসালভেস এই মামলাটি লড়ছিলেন।
বেঞ্চ জানান, রোহিঙ্গা শিশুদের সরকারি স্কুলে ভর্তির অনুমতি চেয়ে দায়ের করা এক জনস্বার্থ মামলার (পিআইএল) প্রেক্ষিতে একই ধরনের আদেশ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। গনসালভেস বলেন, “আদালত যদি এই নির্দেশনা লিপিবদ্ধ করে, তাহলে ৫০০ শিক্ষার্থী সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, “২০১৮ সাল থেকে আমি এই বিষয়ে লড়াই করছি। আদালতের একটি আদেশ সরাসরি ৫০০ শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেবে।”
বেঞ্চ জানান, তাঁরা আগের পিআইএল-এ (PIL) দেওয়া আদেশই পুনর্ব্যক্ত করছে। বিচারপতিরা বলেন, “আমরা চাই শিশুরা প্রথমে সরকারি স্কুলে যোগাযোগ করুক। যদি তাঁদের ভর্তি করতে অস্বীকার করা হয়, তাহলে তাঁরা হাইকোর্টে যেতে পারে।”
১২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, শিক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শিশুর সঙ্গে বৈষম্য করা যাবে না। এই পিআইএল-এ কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সরকারি স্কুল ও হাসপাতালে প্রবেশের সুযোগ পায়।
এর আগে, আদালত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বসবাসের এলাকা এবং তাঁদের বিবরণ জানতে চেয়েছিল। ৩১ জানুয়ারি আদালত এনজিওকে জানাতে বলে, দিল্লিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কোথায় বসবাস করছে এবং তাঁদের কী কী সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও, গনসালভেসকে দিল্লিতে তাঁদের বসবাসের স্থান সম্পর্কে একটি অ্যাফিডেভিট জমা দিতে বলা হয়।
গনসালভেস জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সরকারি স্কুল ও হাসপাতালে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না, কারণ তাঁদের আধার কার্ড নেই। তিনি বলেন, “তারা ইউএনএইচসিআর (UNHCR) কার্ডধারী শরণার্থী, তাই তাঁদের আধার কার্ড নেই। কিন্তু আধার কার্ড না থাকায় তাদের সরকারি স্কুল ও হাসপাতালে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দিল্লির শাহিনবাগ, কালিন্দি কুঞ্জ এবং খাজুরি খাস এলাকায় বসবাস করছে। শাহিনবাগ ও কালিন্দি কুঞ্জে তাঁরা বস্তিতে থাকেন।
এই পিআইএল-এ (pIL) সরকারি স্কুলে রোহিঙ্গা শিশুদের বিনামূল্যে ভর্তি, আধার কার্ড ছাড়াই ১০ম ও ১২শ শ্রেণি এবং স্নাতক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি এবং সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, এবং খাদ্য সুরক্ষা আইনের সুবিধা প্রদানের জন্য কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশনা রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আদালতের এই সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ প্রসারিত হতে পারে। এই রায় রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারগুলির জন্য এখন আশার আলো দেখা দিয়েছে।