উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় বদ্রীনাথ (Badrinath) মন্দির থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মানা গ্রামের কাছে একটি ভয়াবহ হিমস্খলনে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও)-এর অন্তত ৪১ জন শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় মোট ৫৭ জন শ্রমিক বিআরও-এর ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ১৬ জনকে এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের গুরুতর অবস্থায় মানা গ্রামের কাছে ভারতীয় সেনার ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের পুলিশ মহানির্দেশক দীপম শেঠ সংবাদমমাধ্যমকে-কে জানিয়েছেন, “এই ঘটনায় বিআরও ক্যাম্পে ৫৭ জন সড়ক নির্মাণ শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। গত দুই ঘণ্টা ধরে উদ্ধার কাজ চলছে। প্রধান চ্যালেঞ্জ হল খারাপ আবহাওয়া। তুষারপাতের সঙ্গে প্রবল বাতাস বইছে, এবং রাস্তাগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা স্নো কাটার মেশিন ব্যবহার করে রাস্তা খোলার চেষ্টা করছি।” তিনি আরও বলেন, “তিন-চারটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে, কিন্তু ভারী তুষারপাতের কারণে উদ্ধার দলের পক্ষে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”
চামোলি জেলার জেলাশাসক সন্দীপ তিওয়ারি জানিয়েছেন, “বর্তমানে বৃষ্টি এবং তুষারপাত অব্যাহত রয়েছে, তাই হেলিকপ্টার পরিষেবা ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। চলাচল অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।” স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এসডিআরএফ)-এর একটি দল জোশীমঠ থেকে দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। ভারতীয় সেনাকে লম্বাগড়ে রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে, যেখানে বর্তমানে রাস্তা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, সহস্রধারা হেলিপ্যাডে আরেকটি দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলেই এসডিআরএফ-এর উচ্চ উচ্চতার উদ্ধার দলকে হেলিকপ্টারে নিকটতম স্থানে নামানো হবে।
এসডিআরএফ-এর পুলিশ মহানিরীক্ষক রিধিম আগরওয়াল জানিয়েছেন, “আমাদের ড্রোন টিমও প্রস্তুত রয়েছে। তবে, ভারী তুষারপাতের কারণে এখন ড্রোন চালানো সম্ভব হচ্ছে না।” বিআরও-এর কারিগরি প্রকৌশলী সিআর মীনা বলেন, “উদ্ধার কাজ চলছে, কিন্তু তুষারপাতের কারণে দলটি অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।”
An avalanche struck a GREF Camp near Mana village in Garhwal Sector. A number of labourers are feared to be trapped. Indian Army’s IBEX BRIGADE swiftly launched rescue operations inspite of continuing heavy snowfall and minor avalanches. So far 10… pic.twitter.com/adVcAu9g4g
— SuryaCommand_IA (@suryacommand) February 28, 2025
উদ্ধার কাজে ৬০-৬৫ জন নিয়োজিত
ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত প্রথম ছবিতে দেখা গেছে, প্রায় ৬০-৬৫ জন উদ্ধারকর্মী তুষারের মধ্যে কাজ করছেন। ভারতীয় সেনা, ইন্দো-তিব্বতি সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি), এসডিআরএফ এবং বিআরও-এর দলগুলি যৌথভাবে এই উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত রয়েছে। তবে, প্রবল তুষারপাত এবং বাতাসের কারণে অভিযানে বিলম্ব হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা তুষার কাটার যন্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিখোঁজ শ্রমিকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি রাজ্যের ডিজাস্টার কন্ট্রোল রুমে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে চলমান উদ্ধার অভিযানের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, “চামোলি জেলার মানা গ্রামের কাছে বিআরও-এর সড়ক নির্মাণ কাজের সময় হিমস্খলনে অনেক শ্রমিক ভাইয়ের আটকে পড়ার দুঃখজনক খবর পেয়েছি। আইটিবিপি, বিআরও এবং অন্যান্য উদ্ধার দলগুলি ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আমি ভগবান বদ্রী বিশালের কাছে সমস্ত শ্রমিক ভাইদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করি।”
কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং মুখ্যমন্ত্রী ধামির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, “আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য সমস্ত উপলব্ধ সম্পদ ব্যবহার করে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।” তিনি সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।
আবহাওয়ার কারণে জটিলতা
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) উত্তরাখণ্ড সহ বেশ কয়েকটি পার্বত্য অঞ্চলের জন্য একটি কমলা সতর্কতা জারি করেছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত প্রায় ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি এবং তুষারপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আইএমডি জানিয়েছে, এই ভারী বৃষ্টি স্থানীয়ভাবে রাস্তায় বন্যা, নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা এবং আন্ডারপাস বন্ধের কারণ হতে পারে। ভারী বৃষ্টির কারণে দৃশ্যমানতা মাঝে মাঝে কমে যাওয়া, যানজটের কারণে ভ্রমণের সময় বৃদ্ধি এবং কাঁচা রাস্তার সামান্য ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে চামোলি অঞ্চলে অবিরাম তুষারপাতের কারণে এই হিমস্খলন ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার এই প্রতিকূলতা উদ্ধার অভিযানকে আরও জটিল করে তুলেছে। জেলাশাসক তিওয়ারি বলেন, “আমরা আশা করছি আবহাওয়ার উন্নতি হলে উদ্ধার কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে। এখনও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।”
এই দুর্ঘটনা দেশজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী ধামি বলেন, “আমরা সমস্ত শ্রমিকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। জেলা প্রশাসন, সেনা, আইটিবিপি এবং অন্যান্য দলগুলি একযোগে কাজ করছে।” স্থানীয় মানুষ এবং শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও তাঁদের প্রিয়জনদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করছেন।
হিমালয় অঞ্চলের এই অংশটি হিমস্খলনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। ২০২২ সালে উত্তরাখণ্ডে একটি হিমস্খলনে ২৭ জন প্রশিক্ষণরত পর্বতারোহী নিহত হয়েছিলেন। বর্তমানে চলমান তুষারপাত এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিবেচনায় এই ধরনের ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আইএমডি-র সতর্কতা অনুসারে, আগামী কয়েক ঘণ্টা পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
এই মুহূর্তে সমস্ত দৃষ্টি উদ্ধার অভিযানের দিকে। আবহাওয়ার উন্নতি এবং উদ্ধারকর্মীদের প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করছে ৪১ জন নিখোঁজ শ্রমিকের ভাগ্য। দেশবাসী প্রার্থনা করছে তাঁদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য।