বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ নিয়ে জয়শঙ্করের উদ্বেগকে নাকচ ঢাকার

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ নিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের উদ্বেগের পর ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছে। জয়শঙ্কর সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা…

bangladesh-dismisses-jaishankars-concern-about-minority-attacks

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ নিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের উদ্বেগের পর ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছে। জয়শঙ্কর সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এর জবাবে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন এসব উদ্বেগকে অযৌক্তিক এবং অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ভারতীয় সরকারের উদ্বেগের বিষয় নয়। দেশটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন এবং জনগণের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার জন্য দায়বদ্ধ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, “বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিষয় বাংলাদেশ সরকারের।” তিনি আরও বলেন, “যেমন ভারতের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ভারত সরকারের উদ্বেগ ভারতীয় অভ্যন্তরীণ বিষয়, তেমনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারেরই দায়িত্ব।”

   

ড. জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ ভারতের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাবিত করে। তিনি বাংলাদেশকে তাগিদ দেন, “বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিক তারা ভারত সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়।” জয়শঙ্কর আরও বলেন, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ আমাদের চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলছে এবং এটি এমন কিছু, যা নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে, যা আমরা করেছি।”

তিনি যুক্ত করেন, “যদি বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, তবে একদিকে ভারতের প্রতি নিন্দা করে সব কিছু আমাদের ওপর ফেলা যাবে না। আপনি যদি একটি পক্ষ থেকে বলুন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই’, এবং অন্যদিকে প্রতিদিন আমাদের উপর দোষ চাপান, তা তো ঠিক নয়।”

আগস্ট ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার অপসারণের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনাকে অপসারণ করা হয় এবং তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে বাংলাদেশে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনা করছে, তার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস ডিসেম্বর ২০২৪ সালে ভারতের কাছে হাসিনার প্রত্যর্পণের আবেদন করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হোসেন হাসিনার বক্তব্যকে একতরফা উল্লেখ করে বলেন, তার মন্তব্য বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, “যদি আমরা সম্পর্ক উন্নত করতে চাই, তবে ভারতের মাটিতে বসে এক সাবেক প্রধানমন্ত্রী যদি প্রতিনিয়ত বিবৃতি দেয়, তবে তা কেবল সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায়।”

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক স্থিতিশীল দেখতে চায়। তিনি জানান, ভারত তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করেছে। “আমরা চাই সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ হোক এবং স্বাভাবিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরায় চালু হোক। তবে আমরা সীমান্তের ওপাশ থেকে আসা ক্রমাগত শত্রুতাপূর্ণ বার্তা নিয়ে অসন্তুষ্ট,” জয়শঙ্কর বলেন।

ভারত এবং বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, হাসিনার অপসারণ এবং পরবর্তীতে তার ভারতের মাটিতে অবস্থান, এসবই সম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা বাড়িয়েছে।

তবে, উভয় দেশের সরকারই সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে আগ্রহী, তবে কিছু সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন, যার মধ্যে সঠিক যোগাযোগ ও পারস্পরিক সম্মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত আশা করে যে, ঢাকা সরকার নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিজেদের মধ্যে সমাধান করবে এবং একইভাবে ভারতীয় সমস্যাগুলোর প্রতি সম্মান দেখাবে।