অমৃতস্নানে ভিড়, মহাকুম্ভের শেষ দিনে শিবরাত্রির মাহাত্ম্য

প্রয়াগরাজে চলছে ঐতিহাসিক মহাকুম্ভ মেলার (Maha Kumbh) সমাপ্তি। ৪৫ দিন ধরে চলা এই পবিত্র মেলা শেষ হচ্ছে মহাশিবরাত্রির দিন, যা ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাকুম্ভ মেলা…

Maha Kumbh's Grand Culmination Today: Lakhs Flock for Final Amrit Snan

প্রয়াগরাজে চলছে ঐতিহাসিক মহাকুম্ভ মেলার (Maha Kumbh) সমাপ্তি। ৪৫ দিন ধরে চলা এই পবিত্র মেলা শেষ হচ্ছে মহাশিবরাত্রির দিন, যা ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহাকুম্ভ মেলা প্রত্যেকবারই এক বিশাল ধর্মীয় উৎসব হয়ে ওঠে, এবং এবারের মেলা আরও বিশেষ কারণ এটি ১৪৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রয়াগরাজে। শিবরাত্রির রাত থেকেই লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী ত্রিবেণী সঙ্গমে অমৃতস্নানের জন্য উপস্থিত হয়েছেন।

মহাকুম্ভ (Maha Kumbh) মেলার সঙ্গে মহাদেবের (Maha Kumbh) বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। সমুদ্রমন্থন কাহিনিতে ভগবান শিবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, এবং সেই মন্থনের অমৃতকুম্ভের চারটি বিন্দু ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রক্ষিপ্ত হয়েছিল— হরিদ্বার, নাসিক, প্রয়াগ ও উজ্জয়িনী। এই স্থানগুলির মধ্যে প্রয়াগ এক বিশেষ স্থান, কারণ এখানে সঙ্গমের পবিত্র জলে স্নান করতে প্রতিটি হিন্দু পুণ্যার্থীর এক বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। এই কারণেই মহাকুম্ভ মেলার শেষ দিনে, বিশেষত শিবরাত্রিতে, পুণ্যার্থীরা ত্রিবেণী সঙ্গমে অমৃতস্নানে অংশগ্রহণ করেন।

kolkata24x7-sports-News

   

মঙ্গলবার রাত থেকেই সঙ্গমে পুণ্যার্থীদের (Maha Kumbh) আগমন শুরু হয়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রাত ২টোর দিকে প্রায় ১১.৬৬ লক্ষ পুণ্যার্থী সঙ্গমে স্নান করেন। পরবর্তী দুই ঘণ্টায় সেই সংখ্যা বেড়ে ২৫.৬৪ লক্ষ হয়ে যায়। সকাল ৬টার মধ্যে এই সংখ্যা ৪১.১১ লক্ষে পৌঁছায়। স্থানীয় প্রশাসন জানাচ্ছে, আজ সারাদিনে প্রায় এক কোটিরও বেশি পুণ্যার্থী অমৃতস্নান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এত বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থীর সমাগম একটি বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে প্রশাসনের জন্য। তবে এ বিষয়ে প্রস্তুত ছিল যোগী আদিত্যনাথের সরকার। প্রশাসনের সব আধিকারিক এবং কর্মীরা দিনরাত এক করে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, পানি, খাদ্য, এবং যানবাহনের ব্যবস্থা করতে সতর্ক রয়েছেন। সরকারি তরফ থেকে প্রতিটি পুণ্যার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

পুলিশেরও বিশেষ তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সঙ্গমের এলাকা পুরোপুরি নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে যাতে কোনও অঘটন না ঘটে। দুর্ঘটনা বা বিশৃঙ্খলা এড়াতে সারা রাত ধরে কাজ করছেন পুলিশ আধিকারিকরা। এর পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিজেও এই ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং বলেছেন, ‘‘ত্রিভুবনপতি ভগবান শিব এবং পবিত্র নদী মা গঙ্গা সকলের মঙ্গল করুন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এটাই আমার প্রার্থনা, হর হর মহাদেব।’’

মহাকুম্ভ মেলা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অপূর্ব অংশ। প্রতিবারই এই মেলা থেকে মানুষ এক ধরনের আধ্যাত্মিক শান্তি এবং পরিশুদ্ধি লাভ করেন। এবারের মহাকুম্ভ মেলা, বিশেষত শিবরাত্রির দিন, ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবে। পুণ্যার্থীরা সঙ্গমে স্নান করে তাদের জীবনযাত্রার দোষমুক্তি এবং আত্মশুদ্ধির প্রার্থনা করছেন।

এমন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে, লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি এবং শান্তিপূর্ণ অমৃতস্নানের দৃশ্য শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, ভারতীয় সংস্কৃতির এক অনন্য উদাহরণ হিসেবেও গণ্য করা হবে।