প্রাক্তন সেনা থেকে বর্তমানের বাস্কেটবল তারকা, এ এক অন্য খাতে বয়ে যাওয়া জীবনের লড়াই

যখন সন্ধ্যা নামে এইসিএস আরআরসিএটি (AECS RRCAT), ইন্দোরে এক অবসরপ্রাপ্ত জাওয়ান বাস্কেটবল (Basketball) নিয়ে মাঠে নেমে পরেন। একটানা তিন পয়েন্ট স্কোর করেন এবং পরবর্তী সময়ে…

short-samachar

যখন সন্ধ্যা নামে এইসিএস আরআরসিএটি (AECS RRCAT), ইন্দোরে এক অবসরপ্রাপ্ত জাওয়ান বাস্কেটবল (Basketball) নিয়ে মাঠে নেমে পরেন। একটানা তিন পয়েন্ট স্কোর করেন এবং পরবর্তী সময়ে একটি লে-আপ শট করে ছাত্রদের মধ্যে উল্লাসের ছড়িয়ে দেন। এটা তার প্রতিদিনের রুটিন। নাম রাধা চারণ শর্মা (Radha Charan Sharma)। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার ভারতীয় সেনাবাহিনীর (Indian Army)।

   

তার খেলা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। এখন তার বাস্কেটবল দক্ষতা নিয়ে দেশের সর্বত্র আলোচনা চলছে।

শর্মা এক সংবাদ মাধ্যমে জানান তার বাস্কেটবল খেলার ইচ্ছা নিয়ে। তিনি বলেন, “যখন সকালে বাচ্চারা এল, তারা আমাকে বলল, ‘কাকা, আপনার ছবি চমৎকার এসেছে। আপনি বাস্কেটবল খুব ভাল খেলেন।’ আমি বললাম, আমি আর খেলি না। আমি সেনাবাহিনীতে খেলতাম।”

এই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর শর্মা তার জীবনের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পেয়েছেন এবং স্মৃতিতে ডুবে গিয়েছেন যখন প্রথমবারের মতো কনক্রিট কোর্টে তার পদার্পণ হয়েছিল।

 

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

A post shared by SWISH CITY (@_swishcity)

লেআপ শট এবং দৌড়ের শুরু

রাধা চারণ শর্মা কৃষক পরিবারের সন্তান। বিহারের বিন্ড জেলার বাসিন্দা। চেমবালের স্রোত আর গভীর খাঁজের মাঝে তিনি সিদ্ধান্ত নেন একজন সৈনিক হওয়ার।

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, “যখনই সৈন্যরা তাদের ইউনিফর্মে আমাদের গ্রামে আসত, আমি তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম, একদিন আমিও তাদের মতো হতে চাই।”

ছোটবেলা থেকেই শর্মার দৌড়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। তিনি নিজ গ্রামে খাল পাড় ধরে দৌড়াতেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন তার দৌড়ানোর চেষ্টাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

শর্মা বলেন, “আমি সকাল ৫ টায় উঠে দৌড়াতে যেতাম, তিন থেকে চার কিলোমিটার দৌড়াতাম, তারপর ফিরে এসে শরীরচর্চা করতাম। আমি সবকিছুই করতাম – দৌড়, উচ্চতা লাফ, লম্বা লাফ, ৪০০ মিটার, এমনকি ভলিবলও।”

১৯৮৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শর্মা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। সেখানে তিনি নতুন নতুন সুযোগের মুখোমুখি হন – অ্যাথলেটিকস, নেট এবং বাস্কেটবল কোর্ট।

সেনাবাহিনীতে শুরু- ক্রীড়া ছিল এক অংশ

বৈরাগড় রোডে ভোপালের নতুন সৈন্যদের দৌড়ানোর সময়, শর্মা প্রথমে শেষ লাইন পার করেন। দ্বিতীয় স্থান অধিকারী তার থেকে ৪০০ মিটার পিছনে ছিল। এতে করেই শর্মার প্রতিভা নজর এলো। কর্নেল তাকে বেঙ্গালুরুতে সিএমপি সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। এরপর শুরু হয় শর্মার তিন দশকের চাকরিজীবন।

তিনি বিভিন্ন সেনা দলে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। ৮০০ মিটার দৌড়, ক্রস-কান্ট্রি দৌড় এবং বাস্কেটবল খেলতেন।

“যদি খেলতে পারো, তাহলে রাতে ডিউটি থেকেও মুক্তি পাওয়া যেত,” শর্মা হাসতে হাসতে বলেন।

ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত থাকার সময়, বিশেষ করে কাশ্মীর, কেরালা এবং কেরালার রাজপথে শর্মার খেলা ও ডিউটি ছিল অবিচ্ছেদ্য। ১৯৯৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে তিনি একটি স্টান্ট শো করেছিলেন।

অবসর জীবনে ফিরে আসা

২০১৮ সালে শর্মা সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন এবং বর্তমানে তিনি ইন্দোরের আরআরসিএটি RRCAT-এ নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজ করছেন। তবে জীবনের পরিবর্তন হলেও তার শখ এবং শখের প্রতি ভালোবাসা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন সকালে শর্মা এখনো দৌড়ান, হাঁটেন এবং সুযোগ পেলে খেলা চালিয়ে যান।

শর্মা বলেন,”যখন আমি খেলি বা বাচ্চাদের খেলা দেখি, তখন সেই পুরনো দিনগুলো মনে পড়ে যখন আমি সেনাবাহিনীতে দৌড়াতাম এবং খেলতাম।”

৫৮ বছর বয়সী শর্মা এখনও যেভাবে বাস্কেটবল শট দেন, তা দেখে অনেকে মন্তব্য করেছে, “তিনি সম্ভবত মাইকেল জর্ডান হতে চেয়েছিলেন।”

শর্মা অভিযোগ করেন না যে তার জীবনের যে পথ পাড়ি দিয়েছেন, তাতে কোন আফসোস নেই। তার কথায় আগামীকাল সূর্যাস্তের পর তিনি আবার খেলবেন।