এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস) নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে উত্তাল রাজনীতি। ভোটার তালিকায় ‘ভুতুড়ে’ নাম যুক্ত হওয়া, বেআইনি ভোটারদের উপস্থিতি, এবং রোহিঙ্গাদের ভোট দেওয়ার অভিযোগে রাজ্য রাজনীতি একবার আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে এনআরসি নিয়ে ফের মুখ খুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে সুনীল বনশলের একটি সম্মেলনে যোগ দিয়ে, শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, “এনআরসি দেশের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। আমরা জানি, বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান—এই সব দেশের সীমানায় অবস্থিত আমাদের রাজ্য। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি ভোটারদের সংখ্যা বাড়ছে। এটি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ভারতীয় নাগরিকদের ভোটার তালিকায় নাম উঠবে, কিন্তু যারা অবৈধভাবে এসেছেন, তাঁদের নাম থাকলে আমাদের কীভাবে নির্বাচন হবে?”
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, “এখন সময় এসেছে, যখন সমস্ত রাজনৈতিক দলকে একযোগে এনআরসি-এর দাবি তোলা উচিত। উত্তরাখণ্ড, গুজরাট, মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই এনআরসি হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি এই কাজ শুরু করেছে, আর অন্যান্য রাজ্যও এগিয়ে আসছে। আমাদের বাংলায়ও এনআরসি চালু করা উচিত।”
এছাড়া তিনি নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়কের বক্তব্যও তুলে ধরেন, যেখানে প্রশ্ন করা হয়েছে, “শাদ রাডির মতো ‘জঙ্গি’ ভোট কীভাবে দিল? আমাদের রাজ্যে অবৈধ ভোটার এবং রোহিঙ্গারা ভোট দেয়, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কোনও ভূমিকা নেই।”
এনআরসি-র দাবি তোলার পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী ভোটার তালিকায় ‘ভুতুড়ে’ নাম ওঠা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এখানে নির্বাচনী ব্যবস্থার কোনও সুশাসন নেই। নির্বাচনের আগে তালিকাগুলি সঠিকভাবে যাচাই করা উচিত, যাতে অবৈধ ভোটাররা না ঢুকে পড়ে। যদি এনআরসি করা হয়, তবে আমরা ভারতীয় নাগরিকদের চিহ্নিত করে এর মধ্যে সংশোধন করতে পারব।”
এনআরসি নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। গত কয়েকদিনে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ভোটার তালিকা যাচাইয়ের পর বেশ কিছু জায়গায় বেআইনি নাম উঠে আসার অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে বারুইপুরের চম্পাহাটি পঞ্চায়েতের ভোটার তালিকার স্ক্রুটিনির পর ১৮ থেকে ১৯ হাজার ভোটারের পরিবর্তে ২২ হাজার ৪০০ ভোটারের নাম উঠেছিল, যা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারীর এনআরসি নিয়ে দাবি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে।
এছাড়া রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, “এনআরসি রাজনীতি ভোটব্যাঙ্কের খেলা, যা জনকল্যাণের পক্ষে হানিকর। পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ তা মানতে প্রস্তুত নয়।”
তবে এবারের এনআরসি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও তোলপাড় সৃষ্টি করতে পারে, তা একেবারে স্পষ্ট।