মার্কিন শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ, বিনিয়োগকারীদের জন্য ট্রেডিংয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে?

আগামী সপ্তাহে ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে মার্কিন শুল্কের প্রভাব, বৈশ্বিক বাজারের প্রবণতা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি। বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন যে, মার্কিন শুল্ক…

us-tariffs-concerns-what-will-be-the-next-step-for-investors-in-trading

আগামী সপ্তাহে ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে মার্কিন শুল্কের প্রভাব, বৈশ্বিক বাজারের প্রবণতা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি। বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন যে, মার্কিন শুল্ক নীতি এবং অন্যান্য ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বাজারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্ববাজারে বড় ধরনের পরিবর্তনের পাশাপাশি, বৈদেশিক মুদ্রার মুদ্রাস্ফীতি এবং বিশ্ববাজারের অপরিশোধিত তেলের দাম (ব্রেন্ট ক্রুড) সম্পর্কে আরও ধারণা পাওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীরা সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। বিশেষ করে, বুধবার ‘মহাশিবরাত্রি’ উৎসবের কারণে দেশের শেয়ার বাজারে লেনদেন বন্ধ থাকবে, ফলে বাজারের গতিবিধি আরও সীমিত হতে পারে।

   

মোটিলাল ওসওয়াল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের গবেষণা প্রধান সিদ্ধার্থ খেমকা জানিয়েছেন, “এ সপ্তাহে, আমরা আশা করছি, নিফটি বাজারে কিছুটা সংশোধন দেখবে। এটি হবে বৈশ্বিক বাজারের মিশ্র সঙ্কেত, মার্কিন বাণিজ্য নীতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে।”

বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলোর মধ্যে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোর পিসি মূল্য সূচক (Core PCE Price Index) এই সপ্তাহে প্রকাশিত হবে। জিওজিট ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের গবেষণা প্রধান বিনোদ নায়ার জানিয়েছেন, বাজারের মনোভাব এই মুহূর্তে সতর্ক, এবং তারা মনে করেন যে, যতক্ষণ না কর্পোরেট আয়ের বড় পরিবর্তন ঘটে এবং বৈশ্বিক তরলতা সহজ হতে শুরু করে, বাজারে নেতিবাচক মনোভাব থাকবে।

গত সপ্তাহে শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। BSE সেনসেক্স সূচক ৬২৮.১৫ পয়েন্ট বা ০.৮২ শতাংশ হারিয়েছে, আর NSE Nifty50 সূচক ১৩৩.৩৫ পয়েন্ট বা ০.৫৮ শতাংশ কমেছে। শেয়ার বাজারের সবচেয়ে বড় পতনটি হয়েছে শীর্ষ ১০ কোম্পানির বাজার মূলধনের মধ্যে আটটি কোম্পানির ক্ষেত্রে, যেখানে তাদের মোট বাজার মূল্য কমে গেছে ১,৬৫,৭৮৪.৯ কোটি টাকা।

বিশেষ করে, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS) সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যার বাজার মূলধন ৫৩,১৮৫.৮৯ কোটি টাকা কমে গিয়ে ১৩,৬৯,৭১৭.৪৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের বাজার মূলধন ১৪,৫৪৭.৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬,৬১,৩৬৯.৪২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, এবং এটি এখনও দেশের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি হিসেবে শীর্ষস্থানে রয়েছে।

বিশ্ববাজারে মার্কিন শুল্ক নীতির বিষয়ে সংশয় অব্যাহত রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শেয়ার বাজারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কোটক সিকিউরিটিজের গবেষণা প্রধান শ্রীকান্ত চৌহান জানিয়েছেন, “মার্কিন শুল্কের প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ বাজারের মনোভাবকে প্রভাবিত করছে। এই কারণে বৈশ্বিক ও দেশীয় শেয়ার বাজারে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।”

বিশ্বব্যাপী শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতও তাদের বাণিজ্যিক নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। ফলে বাজারে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হবেন।

এ সপ্তাহে বাজারের মধ্যে কিছুটা অস্থিরতা থাকতে পারে, কারণ ব্যবসায়ীরা মার্কিন শুল্ক নীতি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখবে। তবে, ভারতীয় বাজারের জন্য ভারতের জিডিপি তথ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোর পিসি মূল্য সূচক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন যে, শেয়ার বাজারে কিছুটা সংশোধন হতে পারে, তবে ২০২৫ সালে বাজারের শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের জন্য একটি সুস্পষ্ট দৃশ্যমান উন্নতি প্রয়োজন। যদি কর্পোরেট আয় ভালো হয় এবং বৈশ্বিক তরলতা বাড়ে, তবে বাজারের ধারা পরিবর্তন হতে পারে।

অতএব, বিনিয়োগকারীদের জন্য চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, বিশেষ করে মার্কিন শুল্ক নীতি এবং বৈশ্বিক বাজারের অন্যান্য পরিবর্তনশীল বিষয়ের দিকে।