শনিবার সন্ধ্যায় জম্মু ও কাশ্মীরের ( Jammu & Kashmir) মন্দা এলাকায় বৈষ্ণো দেবী মন্দির ফেরত যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় পড়ে। এ দুর্ঘটনায় বাসের চালক মারা যান এবং ১৭ জন যাত্রী আহত হন। আহতরা সকলেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা ভক্ত, যারা মাতা বৈষ্ণো দেবী মন্দির পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয় এবং সকল আহত যাত্রীদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বাসটি হিমাচল প্রদেশের একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর UK-07PA-5640 বহন করছিল এবং এটি দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল। ঘটনার স্থানে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানায়, বাসটি জাম্মু বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মন্দা এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়েছিল। বাসটি একটি মোড় ঘুরতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসের চালক রাকেশ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার মরদেহ উদ্ধারের জন্য দুই ঘণ্টা ধরে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করা হয় এবং আহত ১৭ জন যাত্রীকে উদ্ধার করে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। আহতদের মধ্যে দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা রয়েছেন।
উদ্ধার কাজের জন্য পুলিশ, রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (SDRF), ট্রাফিক পুলিশ এবং দমকল বিভাগের কর্মীরা একত্রিত হয়ে কাজ করেন। দুর্ঘটনাস্থলে সারা রাত ধরে উদ্ধার কাজ চলতে থাকে এবং চালকের মরদেহ উদ্ধার করতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে।
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ দুর্ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন এবং দুর্ঘটনায় নিহত চালকের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে দ্রুত সুস্থতার জন্য আহতদের প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন। তিনি এক টুইটে লিখেছেন, “মন্দা এলাকায় বৈষ্ণো দেবী মন্দির থেকে দিল্লির উদ্দেশে ফেরার পথে বাস দুর্ঘটনায় চালক নিহত হয়েছেন, যার পরিবারকে আমার গভীর সমবেদনা। আহতরা সকলেই স্থিতিশীল এবং চিকিৎসাধীন। উদ্ধারকারী দল এবং কর্মকর্তাদের তৎপরতা প্রশংসনীয়।”
এরপর মুখ্যমন্ত্রী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা জানিয়ে বলেন, “আমি ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি যথাযথ সহায়তা প্রদান করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করছি।” তিনি আরও বলেন, “যাত্রীদের উদ্ধারের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে, যা প্রশংসনীয়।”
এ দুর্ঘটনায় নিহত চালক রাকেশ হিমাচল প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন। উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা জানান, দুর্ঘটনার পর চালক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারান এবং বাসটি ৩০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই স্থানীয় পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
এই দুর্ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তবে প্রাথমিক ধারণা হচ্ছে, বাসটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছিল এবং মোড় ঘুরতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।
এছাড়াও, অনেক স্থানীয় বাসিন্দা দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন। তাঁরা বলছেন, যে ভাবে পুলিশ, দমকল এবং উদ্ধারকারী বাহিনী একযোগে কাজ করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এমন একটি দুর্ঘটনায় অনেক মানুষকে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, মাতা বৈষ্ণো দেবী মন্দির কাশ্মীরের একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা আসেন। এই মন্দিরের পথে অনেক বাস চলাচল করে এবং দুর্ঘটনার ঘটনা বেশিরভাগ সময় রাস্তায় তীব্র মোড় ও দুর্গম এলাকাগুলির কারণে ঘটে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে, বিশেষজ্ঞরা রাস্তাঘাট উন্নত করার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা কমানো যায়। তাদের মতে, রাস্তায় চলাচলের জন্য সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং সঠিক গতির বিধি প্রয়োগ করা জরুরি।
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ’র তৎপরতায় দ্রুত উদ্ধার কাজ এবং চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। তিনি একাধিক বার দুর্ঘটনার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। রাজ্য সরকার আশা করছে, এমন ঘটনা ভবিষ্যতে এড়ানো যাবে এবং দুর্ঘটনা কমানোর জন্য আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দুর্ঘটনায় আহতরা যাদের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যের ভক্তরা আছেন, তারা এখন চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশাবাদী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।