গত শনিবার সন্ধ্যায় মুম্বইয়ের (Mumbai ) চিত্তরপুর শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (টার্মিনাল ২)-এর কাছাকাছি অবস্থিত হোটেল ফেয়ারমন্টে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৫:২৯ টায় হোটেলটির তৃতীয় তলার ছাদে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন মানুষ হোটেলের বিভিন্ন তলায় আটকে পড়েন।
এই ঘটনায় প্রথমে মুম্বই পৌরসভা (বিএমসি)-এর মুম্বই ফায়ার ব্রিগেড (এমএফবি) জানিয়েছিল, আগুনটি মূলত হোটেলের এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিট এবং এক্সহস্ট ডক্টিং এলাকায় শুরু হয়। এটি প্রায় ১০০০ থেকে ১৫০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং হোটেলের ছাদে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। হোটেলটি তিনটি তলাবিশিষ্ট বেসমেন্ট এবং দশটি উঁচু তলাবিশিষ্ট একটি ভবন, যার ফলে উদ্ধার কার্যক্রমে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছিল।
এই দুর্ঘটনায় অধিকাংশ আটকে পড়া ব্যক্তির মধ্যে শ্রমিক ও হোটেলের কর্মীরা ছিলেন। তবে, মুম্বই ফায়ার ব্রিগেডের অত্যন্ত দ্রুতগতির প্রতিক্রিয়া ও দক্ষতার কারণে সবার সুরক্ষিত উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হয়। ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা প্রাথমিকভাবে সংকটপূর্ণ এলাকাগুলোর দিকে দৃষ্টি দেন এবং লোকজনকে হোটেলের সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত উদ্ধার করেন।
হোটেলটি একাধিক তলা বিশিষ্ট হওয়ায় উদ্ধারকার্য ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। তবে, ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা সতর্কতা এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। অগ্নিকাণ্ডের তীব্রতা কমানোর পর প্রায় এক ঘণ্টা সময় নিয়ে তাপমাত্রা কমানোর জন্য শীতলীকরণ কার্যক্রম চালানো হয়। প্রাথমিকভাবে আগুনকে ‘লেভেল ১’ (যা সাধারণত সামান্য মাত্রার আগুন হিসেবে পরিচিত) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল, যা তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল।
প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং রাত ৬:৫০ টায় অগ্নিকাণ্ড নির্বাপিত হয়। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই দুর্ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। খুব দ্রুত উদ্ধার কাজ ও আগুন নেভানোর কার্যক্রমের ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
মুম্বই ফায়ার ব্রিগেডের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আগুনের তীব্রতা তেমন ছিল না, তবে সেটি দ্রুত ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কা ছিল। তবে আমরা খুব তাড়াতাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।”
এই অগ্নিকাণ্ডের পর, হোটেলটি পুরোপুরি নিরাপদ ঘোষণা করা হয় এবং ভবনের প্রতিটি কোণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে সুরক্ষিত করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ভবনটি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত ছিল, যা এই দুর্ঘটনাকে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পরিণত হতে দেয়নি।
এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, দ্রুতগতিতে উদ্ধার অভিযান এবং সঠিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে যেখানে উচ্চতায় নির্মিত ভবনগুলোর মধ্যে প্রচুর মানুষ বসবাস ও কাজ করেন, সেখানে এমন জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন রক্ষায় সঠিক প্রশিক্ষিত কর্মী এবং অগ্নিনির্বাপক সিস্টেম কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে তা আবার প্রমাণিত হলো।
এছাড়াও, হোটেল কর্তৃপক্ষও পুরো ঘটনা নিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলির পুনঃমূল্যায়ন করবে বলে জানা গেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপদের সম্মুখীন হলে আরও ত্বরিত ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুম্বইয়ের ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা মোকাবেলা করতে আরও দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা লাভ করতে কাজ চালিয়ে যাবেন। আগুন লাগার পর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো এবং লোকজনকে নিরাপদে উদ্ধার করা সবার জন্য বড় ধরনের শিক্ষা হতে পারে, বিশেষ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল এবং অন্যান্য উচ্চতায় নির্মিত ভবনগুলির জন্য, যেখানে অনেক মানুষ কাজ ও বাস করেন।
এই অগ্নিকাণ্ডের পর স্থানীয় বাসিন্দারা এবং পর্যটকরাও একে একটি বড় বিপদের মুহূর্ত হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন। তবে, সঠিক প্রস্তুতি ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা সরবরাহের মাধ্যমে মুম্বই ফায়ার ব্রিগেড এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য শহর ও অঞ্চলের জন্য একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস বা হোটেলের মতো ভবনগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থায় আরও উন্নতি আনা জরুরি। ভবিষ্যতে যাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করতে হবে এবং কার্যকরী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সত্যিই সকলের জন্য সতর্কতার বার্তা। এটি প্রতিটি নাগরিককে অগ্নি সুরক্ষা সম্পর্কে আরও সচেতন হতে এবং ভবনগুলোতে সুরক্ষিত উপায়ে বাস ও কাজ করার গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করবে।