প্রধানমন্ত্রীর “প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি-২” পদে শক্তিকান্তের নিয়োগ ঘিরে চাঞ্চল্য

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (RBI) প্রাক্তন গভর্নর শক্তিকান্ত দাসকে (Shaktikanta Das) সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর “প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি-২” পদে নিয়োগ করা হয়েছে। এটি একটি অস্বাভাবিক পদক্ষেপ, কারণ এই…

Shaktikanta Das

রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (RBI) প্রাক্তন গভর্নর শক্তিকান্ত দাসকে (Shaktikanta Das) সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর “প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি-২” পদে নিয়োগ করা হয়েছে। এটি একটি অস্বাভাবিক পদক্ষেপ, কারণ এই প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী একটি সময়ে দুইজন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পাবেন। বর্তমানে PK মিশ্র, যিনি ২০১৯ সাল থেকে এই পদে রয়েছেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

এটি এমন একটি সিদ্ধান্ত, যা সরকারের শীর্ষ প্রশাসনিক স্তরে একটি নতুন যুগের সূচনা হতে পারে। তবে, এই পদক্ষেপের পেছনে কী কারণ রয়েছে এবং এর ফলে সরকারের কাজের ধরনে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন।

   

শক্তিকান্ত দাস: অভিজ্ঞতা এবং প্রশাসনিক অবদান
শক্তিকান্ত দাসের নিয়োগের পেছনে মূল কারণ হতে পারে তাঁর ব্যাপক প্রশাসনিক এবং আর্থিক দক্ষতা। ১৯৮০ ব্যাচের একজন আইএএস অফিসার হিসেবে তিনি ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দপ্তরে কাজ করেছেন। তাঁর ক্যারিয়ারের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ ছিল রেভিনিউ সেক্রেটারি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করা। ২০১৮ সালে তাকে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (RBI) এর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ করা হয়, যেখানে তিনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাংকিং সেক্টরের উন্নতির জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন।

ডিসেম্বর ২০২২ এ তিনি RBI গভর্নরের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন, কিন্তু ২০২১ সালে তাঁকে একটি এক্সটেনশন দেওয়া হয়েছিল। তাঁর আর্থিক নীতি এবং সরকারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা তাকে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বিশেষভাবে উপকারী করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর নতুন প্রশাসনিক কাঠামো
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করছেন, তাতে দুটি প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাখা একটি নতুন পদক্ষেপ। আগে, প্রধানমন্ত্রীর অফিসে একটি অতিরিক্ত প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি থাকত, কিন্তু এখন একাধিক প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাখা হয়েছে, যা সরকারের কাজের গতি এবং কার্যকারিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

পিকে মিশ্র, যিনি ৭৬ বছর বয়সে আছেন, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭২ ব্যাচের একজন আইএএস অফিসার। তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা প্রধানমন্ত্রীর কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, শক্তিকান্ত দাসের নিয়োগ থেকে বোঝা যায় যে সরকার তাঁর অভিজ্ঞতার সঙ্গে সাথে যুব প্রশাসকদের মিশ্রণ ঘটাতে চায়, যাতে নতুন চিন্তা এবং উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি আনা যায়।

শক্তিকান্ত দাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
শক্তিকান্ত দাসের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি-২ পদে নিয়োগ শুধুমাত্র তাঁর আর্থিক এবং প্রশাসনিক দক্ষতার কারণে নয়, বরং তাঁর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং অভ্যন্তরীণ কাজের নেটওয়ার্কের সাথেও সম্পর্কিত। একজন প্রাক্তন RBI গভর্নর হিসেবে, দাসের কাছে এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে যা দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং রাজস্ব বৃদ্ধি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাঁর জন্য এই পদে আসা মানে হচ্ছে আর্থিক ও নীতি বিষয়ক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ।

কেন দুটি প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি?
প্রধানমন্ত্রীর অফিসে দুটি প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাখার সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শক্তিকান্ত দাসের নিয়োগের মাধ্যমে, এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে সরকার প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আরও আধুনিক ও কার্যকরী কাঠামো তৈরি করতে চায়। এমন পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ক্ষমতা এবং কাজের গতিকে আরও দ্রুত এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

এছাড়া, শক্তিকান্ত দাসের সঙ্গে পিকে মিশ্রের ভারসাম্য সরকারকে একাধিক দিক থেকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে সহায়তা করবে। মিশ্র দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং একজন প্রবীণ কর্মকর্তা, যেখানে দাস আর্থিক এবং আধুনিক প্রশাসনিক বিষয়গুলোতে বিশেষজ্ঞ। এই ধরনের দুইজন সেক্রেটারি একসঙ্গে কাজ করলে সরকার আরও ফলপ্রসূভাবে কাজ করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে।

শক্তিকান্ত দাসের নিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ভারত সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিসে নতুন ধারা আনবে। এটি সরকারের কাজের গতিকে আরও দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে পরিচালিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। দুইজন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদে থাকা মানে হলো সরকার তার কাজের ক্ষেত্রে আরও সুনির্দিষ্ট এবং আধুনিক পন্থা অবলম্বন করতে চায়।

বিশেষত, শক্তিকান্ত দাসের আর্থিক এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সরকারের নীতিমালায় নতুন দিশা দিতে সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর টিমের জন্য এটি একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ, যা দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখতে পারে।